কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিন
ডেক্স রিপোর্ট বৃহস্পতিবার রাত ০২:২৯, ৮ জুলাই, ২০২১
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিন (বুধবার)অনেকটা ঢিলেঢালাভাবেই শেষ হয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের মতো এই দিনেও রাজধানীতে লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কের মোড়ে মোড়ে সেনা সদস্য, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা টহল দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকলেও তা ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। তাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছেন। তবে বিনা কারণে বের হয়ে অনেকে আবার পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন। দিয়েছেন জরিমানাও।
কঠোর বিধিনিষেধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় বুধবার (০৭ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে ১১০২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া ২৪৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা।
লকডাউনের সপ্তম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিএমপির ৮টি বিভাগ ১১০২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীতে ট্রাফিক বিভাগ ৮০৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করেছে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। এ নিয়ে লকডাউনে বুধবার পর্যন্ত রাজধানীতে মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪১৮৭ জন।
ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ায় ২৪৫ জনকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। তবে রাজপথ ছিল রিক্সার দখলে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ।
শিল্পকারখানা, ব্যাংক, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিচয়পত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। তবে যারা রিকশায় চলাচল করেছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। মাইলের পর মাইল হেঁটে যান শ্রমিকরা।
তাছাড়া যারা অফিস কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। গণপরিবহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা কিংবা ভ্যানে গাদাগাদি করে যেতে দেখা গেছে অনেককে। তাছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেই ছিল তীব্র যানজট। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাজধানীর মূল সড়কে যেমন লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে তেমনি অলিগলিতে কিছু চায়ের ও মুদি দোকান খোলা থাকায় মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়েছে। তবে অনেকের মুখেই মাস্ক ছিলনা। খিলগাঁও, বাসাবো, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, পশ্চিম রামপুরা হাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে মুদি দোকানগুলো সার্টার অর্ধেক খোলা রেখে চলতে দেখা গেছে। যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পান সঙ্গে সঙ্গে শাটার নামিয়ে কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে যান মালিকরা।
জরুরি পরিসেবা খোলা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় গণপরিবহনের অভাবে বাধ্য হয়েই মানুষকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
লকডাউনের প্রথম দিকে কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা খুব একটা দেখা না গেলেও দিন যত যাচ্ছে বাজারে জনসমাগম ততই বাড়ছে। তবে মুখে মাস্ক পড়ে দোকানদারদের পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। অনেকে স্যানেটাইজারও ব্যবহার করছেন।
এদিকে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকে পণ্য কিনতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। টিসিবির পণ্য কিনতে এসে মানুষ মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। গাদাগাদি করে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। তীব্র গাদাগাদির কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও।
চট্টগ্রাম, সিলেটের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল মেডিক্যাল, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোডে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সাইবোর্ড চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে সমন্বিতভাবে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল সেগুলোতেও বেচা বিক্রি নেই। কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা বাইরে বের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।
কঠোর লকডাউনের সপ্তমদিনে করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৫৯৩ জনে। একই সময়ে দেশে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ১৬২ জন। ফলে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা হলো ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮ জন।