আলীকদম থানচি সড়কের দুই পাশের গাছের বুকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কড়াত
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ১১:৩৩, ৫ জানুয়ারী, ২০২০
সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ বান্দরবান জেলার আলীকদম থানচি সড়কের দু’পাশের পাহাড়ে প্রাকৃতিক যেন অপার সৌন্দর্যরূপ। যা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২৪ হাজার ফুট উচ্চুঁতে এই সড়ক। যে কোন মৌসুমে এই সড়কে গেলে দেখা মিলবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। সেই চিরচেনা প্রকৃতির দৃশ্য পাল্টে দিতে কাজ করছে কিছু অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী। এই সড়কের দুই পাশের সবুজ গাছ গুলোর দিকে তাকালে দেখা মিলবে কড়াত এর আঘাত।
অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় – আলীকদম -থানচি সড়কের বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলবে অসংখ্য ছোট – বড় গাছ কাঠা হয়েছে। পাহাড়ের লাকড়ী সংগ্রহের নামে বেলজিয়াম গাছ, বহেড়া গাছ, গামারী গাছ, গর্জন শিল গাছ, কড়ই গাছ, মেহগনি গাছ সহ নানা প্রজাতির গাছ কাঠা হচ্ছে। শ্রমিকরা দল বেঁধে ছোট বড় অসংখ্য গাছের বুকে নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে কড়াত। শ্রমিকরা এই গাছ গুলো পরিবহনের জন্য গাছের স্তুুপ তৈরি করে রেখেছেন রাস্তার ধারে পরিবহনে তুলার জন্য এর কিছুক্ষন পড়ে একটির পর একটি ছোট বড় পিক আপ গাড়ি যোগে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা পাচার এর উদ্দেশ্য। গাছ কাঠার কারণে সড়কের ২ পাশের অংশের পাহাড় গুলো মরুভূমির মত দেখা যায়।
আলীকদম উপজেলা আঃ লীগের সহ – সভাপতি সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন- পরিবেশের যে ধ্বংসলীলা চলছে তা কি দেখার কেউ নেই…? প্রাকৃতিক ধ্বংসের হাত থেকে যদি বাঁচাতে না পারি তাহলে অচিরেই মানুষের বাসবাসের অযোগ্য হবে। তিনি আরো জানান এখানে কর্মকর্তারা চাকরীর সুবাদে আসেন।তাই প্রকৃতির ধ্বংস হলে ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার পকেট ভারী করার মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়ায় বন উজারে তাদের নিরবতা লক্ষ করা যায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় – আলীকদম থানচি সড়কের পাশে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ ও মাটি দিয়ে ঝিরি ভরাত করে লাকড়ি ও কাঠ পরিবহনের উপযোগী করা হয়েছে অসংখ্য রাস্তা। সদর এলাকার স্হানীয় ব্যবসায়ীরা হলেন – মোহাম্মদ আলী, ইসমাইল, মোঃ বেলাল, মোঃ ইমাম হোসেন, মো বাবুল, মোঃ রিদুয়ান সহ আরো অনেকে এই পেশায় জড়িত আছেন। তারা প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ টি গাড়ীতে করে অবৈধভাবে গাছ কেটে স্হানীয় ইটভাটা ও তামাক চাষীদের কাছে এইসব গাছ পাঁচার করছে।
থানচি সড়কের পাড়ায় বসবাসরত কিছু ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় লোক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাকড়ী সংগ্রহ করার নামে ছোট গাছ কর্তন করা হচ্ছে এর পর পাহাড়ের ভিতরে থাকা পুরাতন বড় বড় গাছ গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। কয়েকজন পাড়া কার্বারী ও হেডম্যানের যোগসাজশে এই গাছ গুলো বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে আলীকদমের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার শামশুল হুদা বলেন – পরিবহনের সময় তথ্য দিলে আমরা লাকড়ি বা কাঠসহ গাড়ী জব্দ করব। থানচি সড়কে গিয়ে লাকড়ি বা কাঠ জব্দ করার জন্য যে লোকবল ও খরচ প্রয়োজন তা আমাদের দ্বারা বহন করা সম্ভব নয়।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এস এম কায়সার বলেন – সড়কের দুই পাশের গাছ ও কাঠ, লাকড়ি পাঁচারের বিষয়টি অবগত ছিলাম না। দ্রুত সময়ে তৈন রেঞ্জের কর্মকর্তা কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আলীকদম ১নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন – সরকার বনায়ন করতে নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এবং বৃক্ষ রোপন করছে। কিন্তুু কাঠ ও লাকড়ি ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে গাছ কাটছে। দ্রুত সময়ে এদের না থামালে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সায়েদ ইকবাল বলেন, রাস্তার আশেপাশে ও সরকারী খাস জায়গা থেকে গাছ কাটার কোন অনুমতি নেই। কেউ যদি আইন অমান্য করে গাছ কাটে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা গ্রহন করা হবে।