আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ লিমন : চলে ৬ঘন্টাব্যাপী অস্ত্রপচার
আবুল কাশেম রুমন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৬:২৬, ২০ আগস্ট, ২০২৪
সিলেটে কোটা সংষ্কার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখন হাসপাতালে আহত অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিলেটের ঢাকা দক্ষিণ-গোলাপগঞ্জ সড়কে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলে যোগ দেন কলেজ ছাত্র লিমন আহমদ (২৭)। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিজিবি আর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর হামলে পড়ে। শুরু করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ। লিমনের মাথায় ও শরীরে বিদ্ধ হয় একে একে তিন তিনটা বুলেট। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লিমন। লাল রক্তে ভেসে যায় পিচঢালা সড়ক।
স্থানীয়রা প্রথমে তাকে উদ্ধার করে দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতের বেলায় ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসায় গুরুত্ব দেননি। ফলে ভোরের আলো ফুটবার আগেই আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্সে করে স্বজনরা তাকে রাজধানী ঢাকার নিউরো সায়েন্স মেডিকেল ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পাঁচ আগস্ট বিকেলে পৌঁছার পরপরই লিমনকে রাজধানীর আগারগাঁও’র ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ সার্জনরা লিমনের মাথায় শুরু করেন অস্ত্রোপচার। টানা সাড়ে ছয় ঘন্টার সফল অস্ত্রোপচারের পর লিমনের মাথা থেকে বের করেন বুলেট। শংকা মুক্ত হন লিমন।
এরপর তাকে পুনরায় সিলেটে নিয়ে এসে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে লিমন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। লিমনের জীবন এখন আশংকামুক্ত হলেও তার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। কেবলই ফ্যাল ফ্যাল করে চারদিকে তাকাচ্ছেন টগবগে লিমন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী লিমন গোলাপগঞ্জ উপজেলার রায়ঘড় গ্রামের তাজ উদ্দিন তাজুলের পুত্র। ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী লিমন পিতা-মাতার ছয় সন্তানের মধ্যে সবার বড়। পেশায় কাঠমিস্ত্রী পিতার বড় সন্তানের এমন অবস্থায় পরিবারটির সামনে এখন ঘোর অন্ধকার। নিজের রোজগার বাদ দিয়ে এখন মৃত্যুর মুখোমুখি থেকে ফিরে আসা পুত্রকে নিয়েই তাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) দুপুরে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দশম তলায় চিকিৎসাধীন লিমনের পরিবারের সাথে এ প্রতিবেদক কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের বেডে থেকে চারদিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছিলেন লিমন। তার পুরো মাথার মধ্যে বাম দিক একটু নীচু। অস্ত্রোপচারের সময় মাথার ওই অংশের খুলি মাথা থেকে আলাদা করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর সেটি পুনঃস্থাপন করে দেবেন চিকিৎসকগণ।
তার পিতা তাজ উদ্দিন জানান, বিজিবি- পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে সেদিন গোলাপগঞ্জে সাতজন নিহত হন। এসময় লিমনের মাথায় ও বাম পায়ে দুটি গুলি লাগে এবং আরেকটি ডান পায়ের উরুতে লেগে সরাসরি বের হয়ে যায়। অপারেশন করে গুলি বের করা হলেও তার মাথার খুলির অর্ধেকাংশ আপাতত খুলে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে আবারও চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে মাথার খুলি লাগিয়ে দেবেন। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক কষ্ট হলেও এখানে ফ্রি চিকিৎসা পাচ্ছি। ডাক্তার বলছেন, থেরাপির মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।