সভাপতি/সম্পাদককের পছন্দের লোকেরাই আসছে কমিটিতে, ছাত্রদলে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা
কামরুজ্জামান শাহীন শুক্রবার রাত ১১:০৮, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত ছাত্রদলে। সংগঠনের যোগ্য-ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের কারণে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই কমিটি মানতে চাইছেন না অধিকাংশ ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রদল নেতারা।
তারা বলছেন, সংগঠনের যোগ্য-ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে সভাপতি/সম্পাদক নিজেদের পছন্দ মত লোক দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। যারা রাজনীতিতে ৫-৬ বছর ধরে সম্পৃক্ত নয়, ঢাকাতে কখনো রাজনীতি করেনি, তাদেরকে পদ দেয়া হয়েছে। আর এই কমিটিতে ৬০-৭০ জন বিবাহিত নেতা, এমনকি দীর্ঘদিন বিদেশে রয়েছেন,গার্মেন্টসকর্মী তাদেরকেও পদ দেয়া হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের পদবঞ্চিত একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের তৃণমূলে অনেক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কারণ যারা ইউনিট কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য না তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এমন নেতার সংখ্যা প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন হবে। আর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন বিবাহিত নেতাও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এছাড়া এসএসসি সনদ নেই এমন কাউকেও এই কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। মূলক যারা সভাপতি/সম্পাদকের পছন্দের তারাই এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
এ বিষয়ে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কমিটি গঠনের আগে (গত ৩০ আগস্ট) বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাকে বাদ দেয়া যাবে।
গত ১৭ এপ্রিল কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মোহাম্মদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে (১১ সেপ্টেম্বর) ৩০২ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর পরই ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং নতুন ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি অনাস্থা জানান।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছাত্রদলের যেসব যোগ্য-ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসাম তুহিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা সিরাজুল ইসলাম, কে এম সাখাওয়াত হোসেন, রাফিজুল হাই রাফিজ, আবুল হাসান চৌধুরী, সুরুজ আহম্মেদ, আতাউর রহমান বুলেট এবং ঢাকা কলেজের সাহাদাত সোহাগ, মাহি বিশ্বাস, খায়রুল প্রমুখ।
এর মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম তুহিন বিগত ৭ কই এপ্রিল ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপাসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য প্রথম বার জেল থেকে পিজি হাসপাতালে আনা হলে; পিজি হাসপাতালে সামনে মিছিল থেকে পুলিশ তুহিনকে আটক করে রিমান্ডসহ প্রায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। ওই মামলায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রদলের সভাপতি/সম্পাদকসহ তুহিন প্রধান আসামী হন।
এরপর ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে মিরপুরে আ’লীগ ও পুলিশের হামলায় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মদসহ গুরুতর আহত হন তুহিন। ওই মামলায় রিজভী আহম্মদসহ তুহিনকে ৫ নাম্বার আসামী করে পুলিশ এবং ১৭ আগস্ট ২০২১ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি গঠনের পর শহীদ জিয়ার মাজারে ফুল দিতে গিয়ে ৩০/৪০টি পুলিশের গুলির শিকার হন। আজও শরীরে গুলি বহন করে দলীয় প্রোগ্রাম ও কর্মসূচী পালন করছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ২০১৩ সালে ২৫ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে কর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মিছিলে তার পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ। তখন তিনি ৫ দিন লাইফ সাপোর্ট এবং ৮ দিন আইসিইউতে ছিলেন। তারা বলেন বয়সের দোহাই দিয়ে তাদের যোগ্যতা-ত্যাগ ও শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের কিছু পলিসি থাকে। হয়তো তাদেরকে (যোগ্য ও ত্যাগী) দলের অন্য কোনো সংগঠনে পদ দিবেন, সেজন্য তাদেরকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ এ প্রতিনিধিকে বলেন, সব পক্ষ এবং গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা কমিটি দিয়েছি। এরপরও যদি কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা অবশ্যই তাকে পদ থেকে বাদ দেবো।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, প্রতিটি কমিটি গঠনের পর বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ থাকে। আর কমিটি গঠনের আগে আমরা সবাইকে ডেকে বলেছি এবং বিবৃতি দিয়েও বলেছি যে, কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে বলেন। আমরা তাকে কমিটিতে রাখবো না।