ঢাকা (সকাল ৮:৪৩) শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত

রাসূল সা. এর আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বুধবার রাত ১১:০২, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্ব ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। তিনি আরবের জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগের অবসানকারী ও মানবতার মুক্তির প্রকৃত দিশারি। তিনি বিশ্ববাসীর জন্য আশীর্বাদ, মহান আল্লাহর ভাষায় রাহমাতুল্লিল আলামিন। তার প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ দরুদ ও সালাম, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

হযরত মুহাম্মদ সা. ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ, মাতার নাম আমিনা। জন্মকালে তাঁর পিতা জীবিত ছিলেন না। আর মাত্র ৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তার মা। তাই পিতা-মাতার অবর্তমানে শৈশবে তাঁকে লালন-পালন করেন তাঁর দাদা ও চাচা। দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন বিখ্যাত কুরাইশ বংশের নেতা। শৈশব থেকেই মুহাম্মদ সা. ছিলেন শান্ত-শিষ্ট ও জাহেলিয়াতের কালিমামুক্ত। কৈশোরে তাঁর হৃদয়ে সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে ভাবাগের উদয় হয়। সমকালীন আরব সমাজের মারামারি-হানাহানি দেখে তাঁর কোমল হৃদয় ব্যথিত হয়। তিনি চিন্তা করলেন কিভাবে হানাহানি বন্ধ করা যায় এবং আর্ত-পীড়িতদের সেবা করা যায়। এ জন্য সমবয়সী তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করলেন। আর গঠন করলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি শান্তিসংঘ। চলমান অন্যায়যুদ্ধ বন্ধ করা ছিল তাদের লক্ষ্য, যা সব যুগের তরুণ-যুবকদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাদের এ উদ্যোগে অন্যায়যুদ্ধ বন্ধ হলেও সমাজের অন্ধকার-কুসংস্কার দূর হলো না। এতে মুহাম্মদ সা. এর কোমল হৃদয় আরও ব্যাকুল হয়। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকেন মানবমুক্তির অন্বেষায়, চলে যান মক্কার অদূরে নির্জন হেরা গুহায়। সেখানে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন তিনি। খুঁজতে থাকেন মানবতার মুক্তি। এমতাবস্থায় মুক্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল ফিরেশতাকে পাঠান তাঁর কাছে। জিবরাইল এসে মহান আল্লাহর বাণী পড়তে বললেন তাঁকে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি পড়তে অক্ষমতা জানান। পরে জিবরাইলের মাধ্যমে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। আর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে মনোনীত করেন। অধিকন্তু মানবতার মুক্তির পথনির্দেশ দিয়ে তাঁর ওপর আল কুরআন অবতীর্ণ করেন। এরপর তিনি মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। তাওহিদের বাণী ও মুক্তির মশাল হাতে নিয়ে তিনি ছুটে চলেন দ্বারে দ্বারে। মুক্তিকামী মানুষ তাঁকে সহজে গ্রহণ করলেও অন্ধকার-কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা বাদ সাধে। তারা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে, ষড়যন্ত্র করে, লোভ দেখিয়ে, যুদ্ধ-সংঘর্ষ বাধিয়ে মুহাম্মদ সা. এর অগ্রযাত্রাকে রোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সত্যনিষ্ঠ-দৃঢ়প্রত্যয়ী মুহাম্মদ সা. আল্লাহর সাহায্যে সুন্দর-ন্যায়ের পথে অবিচল থাকেন। আর মহান আল্লাহর নির্দেশনা ও চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে তিনি মানুষের মন জয় করেন। ফলে জাহেলিয়ার তমসা দূরীভূত হয়ে সত্য-ন্যায়ের আলো উদ্ভাসিত হয় প্রায় সমগ্র আরব বিশ্বে। অবশেষে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল তারিখে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে মদিনা শরিফে তিনি ইন্তেকাল করেন।

হযরত মুহাম্মদ সা. ইন্তেকাল করলেও বিশ্ব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন। সততা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতাসহ সব সদগুণাবলির সমন্বয় ঘটেছিল মহানবী সা. এর জীবনে। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষসহ মানবিক কোনো দুর্বলতা স্পর্শ করেনি তাঁকে। সারা জীবন কাটিয়েছেন সত্য ও ন্যায়ের পথে। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি কঠিন বিপদ আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শ সারা বিশ্বের শতাধিক কোটি মানুষ পালন করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থসহ জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে মহানবী সা. এর অনুপম আদর্শ অনুকরণীয়। মহান আল্লাহর বাণী ‘আল্লাহর রাসূল (মুহাম্মদ সা.)-এর জীবনাদর্শে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’

পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ অভিভাবক। শত ব্যস্ততা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও পরিবারের প্রতি ছিলেন যথাযথ দায়িত্বশীল। হযরত মুহাম্মদ সা. আদর্শ স্বামী ছিলেন। তিনি স্ত্রীদের অধিকার যথাযথভাবে পালন করেছেন। এ কারণে একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীদের কোনো অভিযোগ ছিল না। স্ত্রীদের যথাযথ অধিকার আদায় ও তাঁদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘তোমরা মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ; সুতরাং তোমরা তাদের সাথে সদাচরণ করবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে তাদেরও তা পরাবে’। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ করতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি) মহানবী সা. ছিলেন স্নেহপরায়ণ পিতা। তিনি সন্তানদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেন নাই এবং অন্যরাও যেন বৈষম্য না করেন সে জন্য তিনি ছেলেমেয়ে সন্তানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন।

শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজপ্রতিষ্ঠায় মহানবী সা. এর ভূমিকা অনন্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজে বসবাসকারী প্রত্যেকের অধিকার নিশ্চিত ছিল। শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তাঁর আদর্শ অনুকরণীয়। আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি তিনি ছিলেন যথাযথ দায়িত্বশীল। তাদের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন আন্তরিক ও যত্নশীল। তিনি নিজে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করেছেন এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন না করতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) এমনিভাবে প্রতিবেশীদের প্রতি সদাচরণ ও সহানুভূতিতে তাঁর তুলনা হয় না। প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন সদা জাগ্রত। প্রতিবেশীদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যার প্রতিবেশী তাঁর নির্যাতন থেকে নিরাপদ নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম) অধিকন্তু গরিব-অসহায় প্রতিবেশীকে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুসলিম নয়, যে নিজে পেট পুরে খায় অথচ তাঁর প্রতিবেশী অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায়।’ (বায়হাকি) এ ছাড়া নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, দাসপ্রথা উচ্ছেদ ও কৌলিন্যপ্রথা বিলোপ করে সাম্যভিত্তিক সমাজপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ সা. অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন উদারনৈতিক। রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধান তাঁর নীতি। এ কারণে মদিনায় প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থায় ইহুদি খ্রিস্টান পৌত্তলিকসহ সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে নয়, বরং আইনের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার করাই ছিল তাঁর বিচারপদ্ধতি। এ জন্য তিনি সম্ভ্রান্ত কিংবা নিকৃষ্ট হিসেবে জাতিকে বিভাজিত করেননি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ন্যায়বিচারে অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারে তোমরা সাবধান হবে! অতীতে অনেক জাতি ন্যায়বিচার না করার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমার কন্যা ফাতেমার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারও হাত কাটা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) মহানবী সা. এর এমন কঠোর ন্যায়বিচারে জাহেলিয়া আরব সমাজেও শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

মহানবী সা. ভিন্ন ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতিশীল-সহমর্মী ছিলেন। এ জন্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে তিনি সদাচরণ করেছেন। পৌত্তলিক তায়েফবাসী প্রতিনিধিদলকে তিনি মদিনার মসজিদে স্থান দিয়েছেন। একইভাবে নাজরানের খ্রিস্টানদের জন্য মসজিদে নববীতেই উপাসনার ব্যবস্থা করেছেন। ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে তিনি মদিনায় আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। এমনিভাবে ভিন্ন ধর্মের প্রতি তিনি উদারতা দেখিয়েছেন। তিনি ছিলেন দয়া ও ক্ষমার মূর্তপ্রতীক। যাদের অত্যাচারে তিনি বারবার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন, যারা তাঁকে মাতৃভূমি মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছে তাদের জন্য বিজয়কালে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। চরম শত্রুকেও পরম মমতায় তিনি কাছে টেনেছেন।

প্রকৃতপক্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. অনুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। মহান আল্লাহর ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই আপনি (মুহাম্মদ সা.) উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।’ (আল কালাম:-৪) আর সংঘাতপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মহানবী সা. এর আদর্শ অনুকরণীয় হতে পারে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন উপরোক্ত আলোচনার প্রতি বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে আমল করার তাওফিক দান করুন আমিন।


লেখকঃ-বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী;সাবেক-ইমাম ও খতীব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ;সিলেট



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT