এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন সোমবার রাত ১১:১১, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রভাত টুডু। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একজন আইনজীবী। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম একজন আইনজীবী যিনি বঞ্চিত ও অধিকার হারা আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়সহ সকলের হয়ে কাজ করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আইন পেশায় প্রথম কেউ একজন হওয়াতে খুশি তার সম্প্রদায়ও। এজন্য নিজ ভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঝিলিম ইউনিয়নে তাকে দেয়া হয়েছে সংবর্ধনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম জলাহারে শ্যাম টুডু ও রাজোবালা মুরমুর এর কোল জুড়ে ১৯৮৫ সালে পৃথিবীর আলো দেখেন প্রভাত টুডু। কাঁচা রাস্তা ও মাটির বাড়িতে অযত্ন অবহেলায় আদিবাসী সমাজে বেড়ে উঠা শিশুটিই আজকের বাংলাদেশের ইতিহাসের এ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু।

শ্যাম টুডু ও রাজোবালা মুরমুর পরিবারের সাত ছেলে মেযের মধ্যে প্রভাত টুডু হলেন সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে আসছেন আইনজীবী প্রভাত। আর তাই দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে নিজ জনগোষ্ঠিসহ অধিকার বঞ্চিত মানুষদের জন্য প্রতিবাদী কন্ঠ তিনি। আর বাংলাদেশের প্রথম সাঁওতাল সম্প্রদায় থেকে আইনজীবি হওয়ায় মা বাবা স্ত্রীসহ সকলেই আনন্দীত। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বাংলাদেশের প্রথম সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আইনজীবি হওয়ায় এলাকায় আনন্দের শেষ নেই। দেওয়া হয়েছে তাকে গণ সংবর্ধনাও।

শিক্ষা জীবনে প্রভাত টুডু চাঁপাইনবাবগঞ্জের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিমোহন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, নটরডেম কলেজ থেকে ডিগ্রী এবং সরকারী বাঙলা কলেজ থেকে সমাজকর্মে মাস্টার্স শেষ করেন। আইনজীবি হবার প্রবল ইচ্ছা থেকে ২০১৪ সালে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও ২০১৬ সালে এলএলএম সম্পূর্ণ করে ২০১৮ সালে ঢাকা আইনজীবি সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন।

পরবর্তীতে ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি হিসেবে নাম লিপিবদ্ধ করেন প্রভাত টুডু। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠির প্রথম আইনজীবি হবার গৌরব অর্জণ করায় এলাকায় বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। আর সাঁওতাল আদিবাসীদের পক্ষ থেকে গণ সংবর্ধনা দেয়া হয় প্রভাতকে।

এ বিষয়ে অভিপ্রায় জানতে কথা হয় প্রভাত টুডুর সাথে। তিনি বলেন, আমি আন্দন্দিত। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টিকর্তা আমাকে আইনজীবী হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে আমার আদিবাসী পরিবার অন্য পরিবারের মতো তেমন সুযোগ সুবিধা দিতে না পারলেও আমাকে কখনো হতাশ করেননি তারা। এক্ষেত্রে আমার অন্য ভাই বোনেরাও আমাকে অনেক সাহায্য সহযোগীতা করেছেন। এজন্য মা-বাবার পাশাপাশি তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

বঞ্চিত ও অধিকার হারা আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ আমি আইনজীবী হয়েছি। আপনাদের দোয়া রয়েছে বলেই সৃষ্টিকর্তা এই সম্মান দিয়েছেন। আমি সবার হয়ে কাজ করতে চাই। আদিবাসীরা তাদের নায্য অধিকার ফিরে পেতে দীর্ঘ পথ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে চলেছে। আইন সকলের জন্য সমান। সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের অধিকার রয়েছে নায্য আইনি অধিকার লাভের। আর তাই কেউ যেন আইন বঞ্চিত না হন তার জন্য প্রভাত টুডু আছেন বলে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রভাত টুডুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ, জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আকতার, ঝিলিম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হোসেন ও সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।