ঢাকা (দুপুর ১২:৩৮) শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না! Meghna News বিস্ফোরক আইনে প্রধান শিক্ষক শফিক গ্রেফতার Meghna News নাগরপুরে বিডি ক্লিনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারো মারা গেছে মাদ্রাসা ছাত্র Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিএনপির সাবেক এমপির’র বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত

ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগের সময় সুন্নত আমল ও দোয়া

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী Clock মঙ্গলবার সকাল ০৯:০০, ২৫ অক্টোবর, ২০২২

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করছে ঘূণিঝড়। ‍উপকূলে এ ঘূণিঝড় আঘাত করলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির হবে। হবে জলোচ্ছ্বাসও। প্রাকৃতিক এ মহাবিপর্যয়ে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলেছেন সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারীরা। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

 

اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ وَ الۡفُلۡکِ الَّتِیۡ تَجۡرِیۡ فِی الۡبَحۡرِ بِمَا یَنۡفَعُ النَّاسَ وَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنۡ مَّآءٍ فَاَحۡیَا بِهِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا وَ بَثَّ فِیۡهَا مِنۡ کُلِّ دَآبَّۃٍ ۪ وَّ تَصۡرِیۡفِ الرِّیٰحِ وَ السَّحَابِ الۡمُسَخَّرِ بَیۡنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ

 

‘নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে, লোকের উপকারী দ্রব্যাদিসহ সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের মধ্যে এবং আকাশ হতে আল্লাহর বর্ষিত সেই পানির মধ্যে যদ্বারা তিনি পৃথিবীকে- মরে যাওয়ার পর আবার জীবিত করেন এবং তাতে সকল প্রকার জীব-জন্তুর বিস্তারণে এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যে এবং আকাশ ও ভূমন্ডলের মধ্যস্থলে নিয়ন্ত্রিত মেঘপুঞ্জের মধ্যে বিবেকসম্পন্ন লোকেদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৪)

 

তবে মানুষের কৃতকর্মের গুনাহের কারণেই এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে থাকে। অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বেশি দেখা দেয়। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

 

ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ

 

‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।’ (সুরা রুম : আয়াত ৪১)

 

হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি  নিজেও উম্মতের ওপর এসব দুর্যোগের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য এবং এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন।

 

প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইসতেগফার করতেন এবং সাহাবাদের তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

 

এ জন্য ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কাজ করা জরুরি, নবিজি তাও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-

 

দুর্যোগে ধৈর্য ধারণ করা

 

আল্লাহ তাআলা অনেক সময় কিছু কিছু বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন আবার পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ –  الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ –  اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ

 

‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে-

 

اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ

 

উচ্চারণ : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’

 

‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারাী’, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)

 

দুর্যোগে করণীয় সুন্নত আমল

 

সুন্নত আমল করার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হলো- ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর কাছে তওবা করো।’ (বুখারি ২/৩০; মুসলিম ২/৬২৮)

 

আল্লাহর জিকির করা

 

ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগময় মুহূর্তের সর্বোত্তম জিকির হচ্ছে- নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা।

 

তওবা করা

 

ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগময় মুহূর্তের জিকিরের অন্যতম উপায় হচ্ছে তওবা করা। ইসতেগফার করা। ক্ষমা প্রার্থনার তাসবি পাঠ করা। কেননা যখন প্রচণ্ড ঝড়ো-বাতাস শুরু হতো তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত ৬৯৬)

 

তাকবির ও আজান দেওয়া

 

ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগময় মুহূর্তে সাহাবিদের জীবনেও নামাজ ও ধৈর্যের পাশাপাশি তাকবির এবং আজানের আমল প্রমাণিত। ঝড়-তুফানের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তাকবির (আল্লাহু আকবার বা আল্লাহ মহান) বলা এবং আজান দেওয়া সুন্নত। (তবে এই আজানে ‘হাইয়া আলাছ ছলাহ’ বা নামাজের জন্য আসো এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বা সফলতার জন্য আসো’ বাক্য দুটি বলার প্রয়োজন নেই)।

 

জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে এ দোয়া পড়া সুন্নত

 

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ

 

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা।’

 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ ৫০৯৯; ইবন মাজাহ ৩৭২৭)

 

মেঘের গর্জনে এ দোয়া পড়া সুন্নত

 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-

 

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ

 

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’

 

অর্থ : ‘পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা।’

 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন-

 

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

 

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদ্বাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা- বি আজাবিকা, ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।’

 

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের কারণে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও।’ (তিরমিজি)

 

ঝড়ো বাতাস থেকে বাঁচতে এ দোয়া পড়া সুন্নত

 

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ

 

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’

 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।’ (বুখারি ৩২০৬ ও ৪৮২৯)

 

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের ওপর জোর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সুন্নাত আমলে সময় অতিবাহিত করার বিকল্প নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লারহ কাছে এভাবে নিজ উম্মতের জন্য আকুতি করেছেন।

 

আল্লাহ তাআলা সবাইকে গুনাহ ক্ষমা করে ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT