ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবি, নিখোঁজ ২০ জেলে ভারতের কারাগারে
কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা বুধবার সকাল ১১:৪৯, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ২০ জেলের সন্ধান মিলেছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একটি কারাগারে। তাদের ফিরে পেতে অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা।
তিন মাসের অধিক সময় তাদের সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারে সদস্যরা অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাছিলেন। কিন্তু এখন তাদের পাওয়া গেলেও কবে তারা ফিরে আসবেন এমন প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। দ্রুত সময়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন স্বজনরা।
এদিকে, জেলেদের ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক থাকলেও ঠিক কবে নাগাদ তারা পরিবারের কাছে ফিরতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রাম। এ গ্রামে জেলে বাবুল, ইব্রাহিম, সালাউদ্দিন ও বাবলু। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। ট্রলার ডুবির পর থেকে নিখোঁজ তারা। এরপর থেকে কেটে গেছে তিন মাসের অধিক সময়। গত এক মাস পূর্বে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে জানতে পারেন তারা বেঁচে আছেন, তবে ভারতের কারাগারে। এখন তাদের ফেরার অপেক্ষায় স্বজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেই ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ পরিবারগুলোর অপেক্ষা প্রিয়জনদের ফেরার জন্য। কারও অপেক্ষা স্বামীর জন্য, কারও অপেক্ষা সন্তানের জন্য। আবার কারও বা অপেক্ষা বাবার জন্য। প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ট্রলার ডুবির পর অবশেষে তাদের সন্ধান মিলেছে ভারতে। তারা জীবিত থাকলেও অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে তারা বন্দি রয়েছেন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কারাগারে।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও তিন মাসেও দেশে আনা সম্ভব হয়নি। এতে নিখোঁজদের পরিবারে শঙ্কা যেন কাটছে না।
প্রিয়জনকে ফিরে পেতে অভাব-অনটনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনেরা। নিখোঁজ জেলে ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বলেন, তিন মাস ধরে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। অপেক্ষা করছি স্বামী একদিন ফিরে আসবেই। তার সন্ধান পেয়েছি, পুলিশ বলছে তারা ভারতের কারাগারে রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, কিন্তু এখনও তারা ফিরে আসেনি। তাকে দ্রুত ফিরে আনার জোড় দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
নিখোঁজ বাবুলের মা শাহিনুর বেগম ছেলের জন্য এখনও কান্না করছেন। এ পরিবারেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। অভাবের কারণে স্ত্রী জরিনা বেগম বাবার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন।
শাহিনুর বেগম বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। এ সংসার দেখার কেউ নাই। অভাবের মধ্যে দিন কাটছে। ছেলেটাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।
আবুল কালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, শুনছি তারা ভারতে আছে, তাকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেক অভাবের মধ্যে কষ্টে দিন পার করছি।
কালামের মেয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, আমার বাবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, সেই নাই অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের পরিবারে। বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই সরকারের কাছে।
নিখোঁজদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে দুর্যোগ উপেক্ষা করেই সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন এসব জেলেরা। কিন্তু ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছিলেন এসব জেলে।
নিখোঁজরা হলেন- লালমোহন উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের বাবুল, ইব্রাহিম, আবুল কালাম ও বাবলু।
এছাড়া চরফ্যাশন উপজেলার মোস্তাফিজ, রাকিব, ফারুক, হাসেম, কবির, রিয়াজ, কাঞ্চন, ছালাউদ্দিন, পারভেজ, মিরাজ, সালাউদ্দিন, শফিকুল, খোরশেদ, খলিল, বাবুল, জাকির ও কামাল।
লালমোহন থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, নিখোঁজ জেলেদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে নিখোঁজদের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদের পাশে আছে। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।
এ ব্যাপারে অতিরুক্ত জেলা প্রশাসক মো. তামীম আল ইয়ামিন বলেন, যাদের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, তাদের খুব শিগগির ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
গত ২০ অক্টোবর চর ফ্যাশনের নুরাবাদ গ্রামের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার ২১ জেলে। এদের মধ্যে লালমোহনের ৪জন ও চরফ্যাশনের ১৭ জন রয়েছে।