গৌরীপুরে ৩ মাসেও বিতরণ হয়নি ভিজিডি’র চাল
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ মঙ্গলবার বিকেল ০৫:১০, ২০ এপ্রিল, ২০২১
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচীর আওতায় (ভিজিডি চক্র) ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বিভিন্ন গ্রামের ২৫৯ জন সুবিধাভোগীর মাঝে ২০২১ সালের জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, মার্চ মাসের চাল না পাওয়া ও কার্ড বিতরন না করার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগী জানান কার্ডও নাই চালও নাই কোন সময় পাই কে জানে!
সুবিধাভোগী নাওভাঙ্গা গ্রামের আছমা আক্তার, শামছুন নাহার, শারমিন ও নাপ্তের আলগী গ্রামের মনোয়ারা খাতুন এবং বারুয়ামারী গ্রামের সাবিকুন্নাহারসহ একাধিক সুবিধাভোগী জানান, আমরা কার্ডও পায়নি, বরাদ্দকৃত তিন মাসের চালও পায়নি।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় পরিষদ তালাবন্ধ, দেখা মেলেনি চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তার।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ নূর খোকার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার ইউনিয়ন থেকে যাচাই করে যে তালিকা দেয়া হয়েছিলো মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এটাকে কম্পিউটারে এমন ভাবে করছে যাছাইকৃত তালিকার সাথে মিল নেই। এটা আমি ইউএনও স্যারকে বলছি, আমি যে যাচাই কমিটি করে যাচাই করলাম তাদের কাছে কি জবাব দিব এটা সমাধান করেন। ইউএনও স্যার বলছে তালিকা ঠিক করে দেবে। তিনি এও বলেন যে, সে (মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা) কিভাবে মারকিং করল? কে ৮ পেল কে ৯ পেল সে কাকে চিনে? আমি যে পাঁচ বছর দিচ্ছি আমিতো তাদের মুখ চিনি কাকে দেয়া লাগবে, কাকে দেয়া লাগবেনা। আমি, সাবেক চেয়ারম্যান ফজলে মাসুদ ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ সবাইকে নিয়ে একটা কমিটি করে যাচাই করে তালিকা তৈরী করেছি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের দেয়া তালিকা ঠিক না করে দিলে আমি স্বাক্ষর করবনা বলে দিয়েছি। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সময় চলে যাচ্ছে বলে আমি চাল উত্তোলন করে ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে এনে রেখেছি। ইউএনও স্যারের সাথে কথা হয়েছে দু একদিনের মধ্যে তালিকা চ‚ড়ান্ত করে উনি এসে ভিজিডি’র চাল উদ্বোধন করবেন। তিনি এসময় বলেন, অন্যান্য ইউনিয়নেও খুব একটা চাল দেয়া হয়নি এ নিয়ে সবার সাথেই ঝামেলা করছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যাচাই-বাছাই করে যে তালিকা প্রদান করা হয়েছে ও উপজেলা পরিষদ থেকে যে তালিকা দিয়েছে তার সাথে মিল না থাকায় এই মূহুর্তে নির্বাচনকে সামনে রেখে সঠিক তালিকা না করা পর্যন্ত দিতে চাচ্ছিনা। এই দ্বন্দেই কার্ডগুলো এখনও সমাপ্ত হয় নাই, চাল গোডাউনে আছে এসপ্তাহেই তালিকা চূড়ান্ত হলে দিয়ে দেয়া হবে।
এ অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা বেগম আকন্দ জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের গাফিলতিতে কার্ড ও চাল বিতরন দেরি হচ্ছে, তালিকা অনুমোদন হওয়ার সাথে সাথে নতুন কার্ড চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন কার্ডে ইউনিয়ন কমিটি স্বাক্ষর করে দিলে, আমরা স্বাক্ষর করে বিতরণ করব। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারীকে চেয়ারম্যান সাহেবের ময়মনসিংহের বাসায় পাঠিয়েও ভিজিডি’র নতুন কার্ড আনতে পারিনি। চাল বিতরণের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যেক মাসের ১২ তারিখের মধ্যে ডি.ও ছেড়ে দেয়া হয়, চাল উত্তোলনের দায়িত্ব চেয়ারম্যানদের। সঠিক সময়ে চাল বিতরনের কথা ইউএনও স্যারের সামনে চেয়ারম্যানকে একাধিকবার বলা হলেও অজ্ঞাত কারণে আজও চাল বিতরণ করা হয়নি, এটা দুঃখজনক।
গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান সাহেব স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ভিজিডি’র চাল উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, চাল ও কার্ড বিতরণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।