কাদের খুনের রহস্য উদঘাটন:সাঘাটায় ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে স্বামীকে খুন করে স্ত্রী
আসাদ খন্দকার.সাঘাটা,গাইবান্ধা রবিবার সন্ধ্যা ০৬:২০, ৪ অক্টোবর, ২০২০
স্বামী স্ত্রী’র মধ্যে সাংসারিক বনিবনা না থাকায়, টাকা ও জমি সংক্রান্ত জেরে স্বামীকে ভাড়াটিয়া খুনিদের দিয়ে ৫ লাখ টাকার চুক্তি মিটিয়ে খুন করে স্ত্রী। চলতি বছরের গেল রমজানের ঈদের কিছুদিন পর খুনিরা ঢাকা থেকে টক্কর অথবা তক্ষক খোঁজার নাম করে জনৈক রুবেলের খোঁজে আসে। খুনিরা ফিরে গিয়ে আবার গেল কোরবানী ঈদের ২য় দিন ঐ টক্কর বা তক্ষক খোঁজার নাম করে নিহত কাদেরের ভাই কাবেজের বাড়ীতে আসে। ঈদের ৩য় দিন অর্থাৎ গত ৩রা আগষ্ট সোমবার মাগরিবের পর খুনিরা কাদেরকে অন্যছলে বিয়ের কথা বলে বাড়ী খেকে ডেকে নিয়ে যায় এবং পাশ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ-সোনাতলা রেলওয়ে সড়কের গাড়ামারা ঘুগা (সাতবিলা) নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে খুনিরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন করে। ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই কাদের খুনের রহস্য উদঘাটন করে বোনারপাড়া জিআরপি থানা পুলিশ।
সম্প্রতি বোনারপাড়া জিআরপি থানার এসআই কাজল চন্দ্র রায় এই খুনের ঘটনার রহস্য ও খুনিদের গ্রেফতারের তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, নিহত কাদেরের স্ত্রী আবেদা বেগম ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করতো। স্বামীও তাঁর সঙ্গে থাকতো। সাংসারিক বনিবনা না থাকায় স্বামী কাদের নিজ গ্রামের বাড়ী গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ছিলমানেরপাড়া গ্রামে আসে। স্বামীর টাকা পয়সা ও জমিজমা নিয়ে প্রতিনিয়ত মোবাইলে ঝগড়া হতো। স্ত্রী আবেদা বেগম সন্দেহ করতো জমিজমা ও টাকা পয়সা গুলো নিহত কাদেরের ছোট ভাইদের দিয়ে দিবে। এ সন্দেহ সব সময় আবেদাকে তাড়া করতো। উপায়ন্তু না পেয়ে স্ত্রী আবেদা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ঢাকায় পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকা ভাড়াটিয়া আবুল বাশারের সাথে পরিচয় হয় আবেদার। আবেদা সব ঘটনা খুলে বলার পর স্বামীকে খুন করার জন্য ৫ লাখ টাকার চুক্তি মিটিয়ে ভাড়াটিয়া খুনি আবুল বাশার ও বেলাল হোসেন টক্কর বা তক্ষক খোঁজার নাম করে কাদেরের বাড়ীতে আসে। ১ম দফায় খুন করতে তারা ব্যর্থ হয়। ২য় দফায় তাঁরা খুন করে যে যার কাজে আত্মগোপন করে।
এস আই কাজল চন্দ্র রায় আরো জানান, খুন হওয়ার পর কাদেরের লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুলে দেওয়া হয়।
বোনারপাড়া জি.আর.পি থানা প্রথমে অজ্ঞাত নামা লাশ হিসেবে মামলা করে। কাদের খুন হওয়ার ২ দিন পর লাশ সনাক্ত হয়। পরে কাদের খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজল নিহত কাদেরের ভাই তারাজুলের কাছ থেকে একটি মোবাইল নাম্বার নেয়। পরবর্তীতে উক্ত নাম্বারের কল ডিটেল্স রেকর্ড (সিডিআর) এর মাধ্যমে উক্ত নাম্বারের সাথে নিহতের স্ত্রী আবেদা বেগমের সাথে উক্ত নাম্বারের ব্যক্তির ৮ বার কথা হয়। মোবাইল নাম্বারের এনআইডি বের করে পরিচয় পাওয়া ব্যক্তিই খুনি আবুল বাশার।
তাকে গ্রেফতারের জন্য ২৫ আগষ্ট থেকে ২রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ট্রাকিং এর মাধ্যমে খুনি আবুল বাশার কে ঢাকার মিরপুর-১১ থেকে, অপর খুনি বেল্লাল হোসেন কে ঢাকার কল্যাণপুরের এক হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত ঘটনার পরিকল্পনারী হিসেবে আবুল বাশার (৪৮) নিহতের স্ত্রী আবেদা বেগমের সাথে ৫ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে খুন করার কথা স্বীকার করে।
এর প্রেক্ষিতে খুনি বাশারের তথ্যমতে নিহত কাদেরের স্ত্রী আবেদা বেগমকে ঢাকার কল্যাণপুরের ইনছান চৌধুরীর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ৩ জনকেই বোনারপাড়া জিআরপি থানায় নিয়ে এসে ১৬১ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের ঘটনার স্বীকার করে।
এরপর ৫ই সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবুল বাশার ও বেল্লালকে এবং নিহতের স্ত্রী আবেদাকে ৬ই সেপ্টেম্বর নারী পুলিশের মাধ্যমে আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে তারা ৩ জনই খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কাজল চন্দ্র বলেন, ক্লু লেস মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ বাহিনী অপরাধের রহস্য উদঘাটন করবেই।