কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন
ডেক্স রিপোর্ট রবিবার রাত ০১:০৪, ৪ জুলাই, ২০২১
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের তৃতীয়দিন শেষ হলো শনিবার। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও রাজধানীতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কের মোড়ে মোড়ে কড়াকড়ি অবস্থানে সেনা সদস্য, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা। এরপরও দ্বিতীয় দিনের চেয়ে তৃতীয়দিনে (শনিবার) রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়িসব মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছেন। অনেকে লডকাউনে ঢাকার ফাঁকা রাস্তার দৃশ্য দেখতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। তৃতীয়দিনে কঠোর লকডাউন ভঙ্গ করে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৬২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩৪৬ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে সেনা সদস্য, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থানে পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ।
তবে শিল্পকারখানা, রিক্রুটিং এজেন্সি ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পরিচয়পত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। তবে যারা রিকশায় চলাচল করেছেন তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গত দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনেও ভোগান্তিতে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। মাইলের পর মাইলে হেঁটে গার্মেন্টস শ্রমিকরা গন্তব্যে যান।
রাজধানীর মূল সড়কে লোকজনের আনাগোনা কম দেখা গেলেও অলিগলিতে কিছু চায়ের ও মুদি দোকান খোলা থাকায় মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, পশ্চিম রামপুরা হাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাল অলিগলিতে মুদি দোকানগুলো সার্টার অর্ধেক খোলা রেখে চলতে দেখা গেছে। যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পান সঙ্গে সঙ্গে শাটার নামিয়ে কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে যান মালিকরা।
জরুরি পরিসেবা খোলা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকা এবং গণপরিবহন বন্ধে বাধ্য হয়েই মানুষকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
গতকালের তুলনায় আজকে কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতাদের সমাগম একটু বেশি ছিল। মুখে মাস্ক পড়ে বাজারগুলোতে দোকানদাররা পণ্য বিক্রি করছেন। অনেকে স্যানেটাইজারও ব্যবহার করেছেন। তবে লকডাউনের আগের যেমন বাজারে ক্রেতাদের চাপ ছিল এখন সেই তুলনায় কম থাকায় কাঁচাবাজারের দোকানও কম খোলা ছিল।
চট্টগ্রাম, সিলেটের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল মেডিক্যাল, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোডে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সাইবোর্ড চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিকে সমন্বিতভাবে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। আর টিকাটুলিতে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সমন্বয়ে চেকপোস্ট বসেছে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল সেগুলোতেও বেচা বিক্রি নেই। কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
শনিবার (৩ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকাডউনের তৃতীয়দিনে নির্দেশনা ভঙ্গ করায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩৪৬ জনকে জরিমানা করেছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা।
এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম আরও বলেন, সরকার ঘোষিত লকডাউনে সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ৮৮৫টি মামলায় ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করেছে ডিএমপি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ।
সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের তৃতীয়দিনে সারাদেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩৪ জন মারা গেছেন। করোনায় মৃত্যুার হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ নিয়ে টানা সপ্তম দিনের মতো দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু একশ’র ওপরে। দেশে করোনায় মোট মৃত্যের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯১২ জন হয়েছে। শনিবার (৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৩ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ২২ হাজার ৬৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬ হাজার ২১৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ২৭.৩৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৭৭৭ জন করোনা রোগী। সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ৮ লাখ ২৯ হাজার ১৯৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৩৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৮৪ জন আর নারী ৫০ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ ১০ হাজার ৫৮০ জন আর নারী চার হাজার ৩৩২ জন মারা গেছেন।
নতুন মৃত ১৩৪ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ ৬৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চারজন আর ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মারা গেছে একজন।
মারা যাওয়া ১৩৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জন, রাজশাহী বিভাগের ২৩ জন, খুলনা বিভাগের ৩৯ জন, বরিশাল বিভাগের তিনজন, সিলেট বিভাগের একজন, রংপুর বিভাগের ১৫ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগে চারজন মারা গেছেন।