ওরাই হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার কারিগর
নিজস্ব প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৭:৪৩, ১১ আগস্ট, ২০২২
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আমাদের সংবিধানে এই অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষার প্রসারে সমাজের সর্বস্তরে কাজ করছে। এই ক্ষেত্রে সফলতাও ব্যাপক। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন। ১৯৭৪ সালে কুদরাত–এ–খুদা প্রণীত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন’ ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার সুপারিশ করে। ১৯৮১ সালে আলাদাভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সব দেশ ঐকমত্যে পৌঁছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহীত হওয়ার এক যুগেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজও এগিয়ে চলছে। সমন্বিত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ। সুশিক্ষিত, আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার পর্যায়ক্রমে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ বাস্তবায়ন করছে। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার ঈষর্ণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষাকে মানসম্মত, সর্বব্যাপী ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবছর ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস উদযাপন করা হয়। এই উৎসবের দিনে প্রাক–প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও এসএসসি স্তরে প্রায় ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করছে সরকার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি প্রাক–প্রাথমিক স্তরে ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, সাদরি, ত্রিপুরা ও গারো) শিক্ষার্থীর মাঝে নিজ নিজ মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
আমার নির্বাচনি এলাকা রাজধানীর ‘গেটওয়েখ্যাত’ দাউদকান্দি উপজেলা। উপজেলা পরিষদের দু–মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে আমার এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মান–উন্নয়ন এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। এই ক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, স্কুল মাঠ ভরাটের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ক্রীড়ামুখী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করা, সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ ও জাতীয় দিবসগুলো শ্রদ্ধা–সম্মান সহকারে পালন, স্কুলগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করেছি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছেন; আমার এলাকার শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। নিয়মিত পরামর্শ এবং উন্নয়নের জন্য অর্থিক যোগানসহ দিকনির্দেশনা দিয়ে অবদান রাখছেন; আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া। এই শিক্ষানুরাগীর সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে দাউদকান্দি উপজেলার শিক্ষার কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সুচারুভাবে যেসব কাজ এগিয়ে নিচ্ছি তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১. আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে পড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
২. ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিশুদের বসবার জন্য টুল–বেঞ্চ ও নানা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
৩. উপজেলার সকল স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষানীতি ও দিকনিদের্শনামূলক তথ্যবহুল বই এবং বিভিন্ন প্রকাশনা সরবরাহ এবং প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বৃক্ষরোপণ, ফুলবাগান করা এবং বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি করা হয়েছে। বেশির ভাগ স্কুলে ‘মিড ডে’ মিল চালু রাখা হয়েছে। শিশুদেরকে বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। খেলাধুলার জন্য মাঠ সংস্কার, বিকল্প মাঠ ব্যবস্থা করে আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
৫. উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্প্রসারণে বিভিন্ন সময়ে রেডিও–টেলিভিশনে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে সবার সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এবং সঠিক পরামর্শগুলো নিয়ে বিদ্যালয়ের কমিটি ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
৬. নিয়মিতভাবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শন করা একটি রুটিন কাজ। এতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এবং শিক্ষকগণকে নিয়মিতভাবে সমস্যা সমাধানসহ বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
৭. প্রতিটি বিদ্যালয়ে কাব গঠনে সহযোগিতা করা হয়েছে।
৮. আন্তঃবিদ্যালয়ের কাব সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে সভা–সেমিনার–সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
৯. বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং শিক্ষক–শিক্ষিকাদের এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা, ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতায় গরিব শিশুদের খাতা, পেনসিল ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১০. ব্যক্তিগতভাবে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষানুরাগীদের আর্থিক সহায়তায় গরিব শিশুদের স্কুল পোশাক এবং জুতা সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
১১. প্রতিটি বিদ্যালয়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত এবং ভালো ফলাফলের অধিকারী শিশুদেরকে বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত করা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে শিক্ষা সফর, জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার, জাতীয় সংসদ ভবনসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষণীয় স্থাপনা দেখা এবং এর সম্পর্কে জানার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আমার দায়িত্বের আওতায় আমি চেষ্টা করেছি, শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার লক্ষ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, জাতির পিতার জন্মদিন–১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস পালন, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য তুলে ধরা; যাতে শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।
উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করেছি মুখস্থ ও নোট–বই ও গাইডনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে; সৃজনশীল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠদান পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনয়নে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাবৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সমতা বিধানের লক্ষ্যে; সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় উপবৃত্তি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ; মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপবৃত্তির টাকা অনলাইনে প্রদান করার বিষয়টি আরও সহজতর করা।
আমরা মহামারি করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক/কর্মচারীকে মাস্ক, ফেইস শিল্ড, গগলস, হেড নেট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করার চেষ্টা করেছি। কারোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। আর এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগে একবার এবং কুমিল্লা জেলায় দুইবার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছি। আমার এই সম্মান আমি দাউদকান্দিবাসীর প্রতি উৎসর্গ করেছি।
একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৯ সালে, তবে সেটা প্রথমে প্রশাসনিক স্তরের মূল কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৩০ সালে বেঙ্গল (রুরাল) প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ৬–১১ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৫৯ সালে শিশু অধিকারের ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ–উত্তর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর ১৯৫৪ সালে ২১ দফায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি ঘোষণা করে। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন এবং ১৫ বছরের মধ্যে আট বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করে। একই সময়ে ইউনেস্কোর উদ্যোগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ২০ বছর মেয়াদি ‘করাচি পরিকল্পনা’ প্রণীত হয়। তাতে বলা হয়, এই অঞ্চলের ১৫টি দেশে সাত বছর মেয়াদি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশগুলোর দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘ বিরতির পর ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯১৮ সালের মধ্যে দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের।’ ২০১০–১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়:-কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেশাত্মবোধের বিকাশ ও দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা; শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা; শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন–দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জন এবং পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলা। কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহ ও মর্যাদাবোধ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা সৃষ্টি; আদিবাসীসহ সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্ব–স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ–সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আমার এই বিষয়টি তুলে ধরার উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিক্ষার প্রসারের ধাপটি এখন কোন পর্যায়ে তা স্পষ্ট করা। শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায়। এই দৃষ্টান্ত আজ বহু দেশের জন্য অনুকরণীয়।
এ কথা সত্য যে, আমাদের বহুধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার (কমিউনিটি বিদ্যালয়, রেজিস্ট্রিকৃত ও রেজিস্ট্রিহীন বিদ্যালয়, সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ইত্যাদি) মধ্যে বিরাজমান প্রকট বৈষম্য দূর ও সমন্বয় জরুরি।
আমি মনে করি, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা–জবাবদিহিতা ও শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা আইন প্রণয়ন, ধনী–দরিদ্র নির্বিশেষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে সফল উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এই ক্ষেত্রে আমরা সফল হলে দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী হবে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার এক–একজন যোগ্য সৈনিক।
ওরাই হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার কারিগর। আমি তাদের সে চোখেই দেখি। আমাদের প্রত্যাশা আমরা সে পথেই এগোচ্ছি।