সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি শুরু
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন রবিবার বিকেল ০৪:৩২, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
অবশেষে দীর্ঘ ৮ দিন বন্ধ থাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ শুল্ক স্থল বন্দর দিয়ে পূনরায় পাথর আমদানি শুরু হয়েছে। অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ১৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ ডলার করার প্রতিবাদে চলতি আগস্ট মাসের ২ তারিখ বুধবার থেকে ৯ তারিখ বুধবার পর্যন্ত পাথর আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। পরে আলোচনা সাপেক্ষে আমদানিকারকরা বর্ধিত রেটেই পাথর আমদানিতে রাজি হলে বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) সকাল থেকে আবারো ভারতের মহদীপুর স্থল বন্দর দিয়ে পাথর ভর্তি ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করে বাংলাদেশে। আর গত ৮ দিনে এই বন্দরের প্রধান আমদানি পন্য পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছিল এই স্থল বন্দর।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, দৈনিক ৩ শত থেকে সাড়ে ৩ শত ভারতীয় ট্রাক পন্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে ২ শত থেকে আড়াইশো ট্রাকেই আসে বিভিন্ন রকমের পাথর। এতে প্রতি টন পাথরের আমদানি মূল্য ১৩ ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে শুল্ক আদায় করা হতো। সম্প্রতি হঠাৎ করেই তা বাড়িয়ে ১৫ ডলার করা হয়। এর প্রতিবাদেই গত বুধবার (২ আগষ্ট) থেকে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু আগের পরিমাণ অর্থাৎ ১৩ ডলার করার দাবিতে পাথর আমদানি বন্ধ করে দেয় আমদানিকারকরা। আর এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারক ও শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে পাথর আমদানিকারক তরিকুল ইসলাম জানান, এমনিতেই ডলার সংকট। তার উপর প্রতি টন পাথরে ২ ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়ানোর সীদ্ধান্ত অযৌক্তিক। যার ফলে তা কমানোর দাবিতে আমরা গত ৮ দিন আমদানি বন্ধ রাখি। তবে আমদানি বন্ধ রেখে উল্টো আমাদের আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
আমদানিকারক এরশাদ আলী বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি পাথর আমদানি হয় সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে। কিন্তু গত ৮ দিন ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় আরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের দাবি সরকার এই সীদ্ধান্তটি বিবেচনা করে দেখবে।
এদিকে সোনামসজিদ স্থল বন্দর আমদানি রফাতানিকারক গ্রুপ বন্দরের দূরাবস্থার কথা বিবেচনা করে গত বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেলে এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সেখানে অধিকাংশ আমদানিকারক ১৫ ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুতেই পাথর আমদানির বিষয়ে মত দিলে ২ ডলার বেশিতেই পাথর আমদানির সীদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শ্রমিক মোজাহার আলী জানান, এক সপ্তাহ ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় কাজ ছিল না। অলস বসে সময় পার করছিলাম। পাথর আমদানি চালু হওয়াতে আবারও কাজ শুরু হয়েছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, এই স্থল বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে পাথর। যা গত ৮ দিন ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। ফলে বন্দরে ধীরগতি দেখা যায়। তবে আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সীদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারও পাথর আমদানি শুরু হয়েছে৷
তবে গত ৮ দিনে ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকলেও পেঁয়াজসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক ছিলো বলে জানান, সোনামসজিদ স্থল বন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউনুস আলী। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা তাদের সীদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাথর আমদানি শুরু হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সোনামসজিদ স্থল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১৮ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৩৭ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৬১৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা।