সাঘাটায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন : যাচ্ছে জাপান ও সিঙ্গাপুরে
আসাদুজ্জামান খন্দকার, সাঘাটা, গাইবান্ধা বুধবার বেলা ১২:২১, ১২ এপ্রিল, ২০২৩
সিদ্দিক হোসেন পেশায় একজন কৃষক। তার জমি মাত্র ৫০ শতক অর্থাৎ দেড় বিঘা। কৃষি কাজ করেই তার সংসার চলে। তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে জামানি কোকি ১৪গো জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। তার ঐ জমিতে ৫ হাজার ২শ ৬০ কেজি আলু উৎপাদিত হয়েছে। যার মূল্য প্রতি কেজি ধরা হয়েছে ১৬ টাকা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮৪ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। শুধু কৃষক সিদ্দিকই নন। তার মতো সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী, নজু মিয়া, নূরুল হুদা, নূরুল ইসলাম এবং চন্দনপাঠ গ্রামের আজাদ হোসেন, আবুল কালাম, মাহফুজার, সামসুদ্দিন, মোকলেছুর, আজাদুল, তৌহিদুল সহ মোট ১৩ জন কৃষক এই মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন। কৃষক সিদ্দিকের মতো তারাও খরচ বাদে লাভের মুখ দেখেছেন। ঐ ১৩ জন কৃষক বাঙ্গালী নদীর চরবেষ্টিত পতিত জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করেন। প্রত্যেক কৃষক মিষ্টি আলুর চাষ করে লাভ বেশি হওয়ায় আরও আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় মিষ্টি আলুর ফলন বৃদ্ধি করতে সার্বক্ষনিক তদারকি করেছেন সাঘাটা উপজেলা কৃষি বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।
তাদের দিক নির্দেশনায় কৃষকরা আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন। এক একটি মিষ্টি আলুর ওজন হয়েছে কমপক্ষে দেড় পোয়া থেকে হাফ কেজি। আর এসব মিষ্টি আলু ক্রয় করেছেন জাপান দেশের নারুতো জাপান কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠান। জাপানের ঐ কোম্পানি কৃষকদের নিকট থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে। যার বাজার মূল্য ৩৮লক্ষ ৯০হাজার। আবার জাপানে বাংলাদেশি টাকা হবে প্রায় ৫০ইয়েন । শুধু জাপান নয় সিঙ্গাপুরেও এই মিষ্টি আলু রপ্তানী করা হচ্ছে। নারুতো জাপান কোম্পানির
সিনিয়র ম্যানেজার কৃষিবিদ মেজবাউল ইসলাম বলেন, কোম্পানির মাধ্যমে ৭শ৯৫শতক অর্থাৎ ৮একর জমিতে ৩৭জন কৃষকের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর চাষ করা হয়।
এতে মোট ফলন হয় ৩৪.১৫মেট্রিক টন। এর মধ্যে ক্রয় করা হয় ২৪.৩১৭মেট্রিক টন। বাকিগুলো পোকা ধরা, কেটে যাওয়া, ইঁদুর খাওয়া, ছোট আলু ও ৫০গ্রাম এর নিচে হওয়ায় সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগসূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাঘাটা উপজেলার বাঙ্গালী নদীর চর ও নদীর তীরবর্তী পতিত ১শ৭০হেক্টর জমিতে জাপানি কোকি ১৪গো জাতের ১০হেক্টর ৭৫বিঘা ও অন্যান্য জাতের ১শ৬০হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করা হয়েছে। এবার বাঙ্গালী নদীর চরাঞ্চল ও নদীর নিকটবর্তী পতিত জমিতে উৎপাদিত মিষ্টি আলু জাপান ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানী
হচ্ছে এই প্রথমবার। কৃষি বিভাগের কারিগরী সহযোগিতায় জাপানের নারুতো জাপান কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠানটি কৃষকের জমি থেকে সরাসরি মিষ্টি আলু কিনে নিয়ে জাপান ও সিঙ্গাপুরে পাঠাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশে চরের মিষ্টি আলুর চাহিদা রয়েছে। এসব মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াজাত করে প্রথমে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান,
চরাঞ্চলের পতিত জমিতে চাষের আওতায় মিষ্টি আলু চাষাবাদ করায় দুফসলি ও তিনফসলি জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে। এতে অনাবাদি পতিত জমি চাষাবাদেরআওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন দেশে চরের মিষ্টি আলুর চাহিদা রয়েছে। এসব মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াজাত করে প্রথমে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।