সবাই এমপি হতে চান।
Alauddin Islam বুধবার বিকেল ০৫:৫০, ২৫ জুলাই, ২০১৮
সবাই এমপি হতে চান। কেউ আর কর্মী থাকতে চান না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ছুটছেন। কোন রাজনৈতিক অতীত নেই, এলাকায় জনসম্পৃক্ততা নেই, নেই কোনো জনপ্রিয়তা এমন ব্যক্তিরাও এমপি হতে চান। বাবা সেই কোন আমলে এমপি ছিলেন তার নাম ভাঙিয়ে সন্তানরা এমপি হতে চান। মাঠের রাজনীতিতে তার ভূমিকা থাক না থাক, তাতে কিছু আসে যায় না। তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। এইসব এমপি পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল দলের নেতাদের দুয়ারে যত না ছুটছেন তার চেয়ে বেশি যাচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। জাতীয়, স্থানীয় দৈনিকে হামেশাই তাদের প্রার্থী হিসাবে নাম লেখাচ্ছেন, ছবি ছাপাচ্ছেন।
আবার অনেকে এমপি হতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়াচ্ছেন, নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামা এমন তিন সহস্রাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর ওপর চরম ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলের একাধিক বৈঠকে বলেছেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সকলের আছে। তবে প্রার্থী হতে গিয়ে দলকে বদনামে ফেলবে এটা কোন মতেই মেনে নেব না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, কেউ নমিনেশন পাবেন কি পাবেন না, সেটা নির্ভর করছে এলাকায় কে কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন তার উপর। তিনি বলেন, ‘আর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে কতটুকু মূল্যায়ন করেছেন, সেটাও কিন্তু আমি বিবেচনা করবো।’
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক দলের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্টও ছিল না, তারাও নেমেছেন এমপি হওয়ার মিছিলে। ব্যবসায়ী হিসাবে অর্থবিত্ত গড়েছেন, জীবনে একবার এমপি হতে চান। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাক বিশ্বাস করেন অর্থের জোরে কি না হয়! খরচপাতি যেখানে যা লাগছে তা ব্যয় করতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী ব্যক্তি-গোষ্ঠীর ছায়ায় থেকে অতীতে বা বর্তমানে ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারি ভালোই করেছেন। টাকা অনেক হয়ে গেছে, টাকার জোরে দলের বিভিন্ন পদ-পদবী অর্জনও করেছেন। এখন এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটছেন। দলে কোনো পদ না থাকলেও কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। তার প্রয়াত বাবা কমান্ডার মোহাম্মদ বজলুর রহমান একসময় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। মিজানুর রহমান বিটু কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত বছর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্য এক নেতার বিরোধিতায় প্রার্থী হতে পারেননি। এবার আর তিনি পৌরসভা বা উপজেলায় নয়, কুষ্টিয়া-৪ আসনে (কুমারখালী-খোকসা) দলীয় মনোনয়ন চান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ব্যক্তি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেই হিসেবে ৩শ আসনের প্রতিটিতে গড়ে ১৫ জন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান এমপিদের মধ্যে অনেকটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আবার অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মিথ্যা তথ্য দিয়ে দলীয় এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, লিখিতভাবে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দেওয়া হচ্ছে অনেক এমপির বিরুদ্ধে। পরে ওই অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্যের বিষয়টি উঠে আসছে। সম্প্রতি রাজবাড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর হাকিম এমপির বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা অভিযোগ ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেন ওই এলাকার এক শ্রেণীর নেতা-যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থক। অভিযোগগুলো ছিল খুবই ভয়াবহ। বিষয়টি গোপনে অনুসন্ধান চালান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি টিম। পরে দেখে যায় অভিযোগের বেশিরভাগ তথ্য অসত্য। শুধু তাই নয়, যেসব নেতাদের স্বাক্ষরসহ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, ওই স্বাক্ষরের বেশিরভাগ নকল করা। যার নামে স্বাক্ষর এসেছে, সে কিছুই জানে না। শুধু এ আসন নয়, অধিকাংশ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় এমপি-নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছেন। বিষয়টি মোটেও ভালভাবে নিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সম্প্রতি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ ধরনের অপপ্রাচার না চালাতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জোর মনিটরিং চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, দলের প্রতি অনুগত, ভাল ইমেজ আছে ও দুর্নীতিমুক্ত এমন জনপ্রিয় প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দলের সাংগঠনিক প্রতিবেদন, সরকারি-বেসরকারি জরিপেও গুরুত্ব পাচ্ছে এগুলো।