ধর্মপাশায় বিকল্প ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে রক্ষা পেল প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ রবিবার রাত ০৯:১১, ২৪ এপ্রিল, ২০২২
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) অধীনে থাকা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ডোবাইল ফসলরক্ষা বাঁধটি ভেঙে গিয়ে ফসলডুবির ঘটনার পর, ওই হাওরের অবশিষ্ঠ বোরো জমির ফসলহানি ঠেকাতে নির্মাণ করা হয়েছে, পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি বিকল্প বাঁধ। এই বাঁধটি নির্মাণ করায় চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ২হাজার ৭৭০ হেক্টরসহ ও উপজেলার বিভিন্ন হাওরের আরো ৭০০০ হেক্টর জমির ধান ফসলডুবির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
২ দিন যাবত সারাদিন ঝলেমলে রোদ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কৃষকেরা মনের আনন্দে ওই হাওরের ধান কেটেছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র্র সোনার থাল হাওরে এবার ২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়। এই হাওরের ডোবাইল ফসলরক্ষা বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে গত ৫ এপ্রিল বিকেল চারটার দিকে ডোবাইল ফসলরক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে করে ডোবাইল হাওরের ১৮৫ হেক্টর বোরো জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
খবর পেয়ে বাঁধটি ওইদিনই পরিদর্শনে আসেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনদের সামনে উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরে থাকা অবশিষ্ঠ ২হাজার ৭৭০ হেক্টর বোরো জমির ধান ফসলডুবির হাত থেকে রক্ষায় বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেনকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। এমনটি ওই হাওরের ফসলডুবি ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করতে যত টাকা খরচ হবে তিনি চেয়ারম্যানকে পুরো টাকা দেবেন বলে চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেন।
৫ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থেকেই অ্যাকক্সেভেটর (খননযন্ত্র), ড্রাম ট্রাক, বাঁশ, মাটি ভর্তি বস্তা মাটি ও শ্রমিক নিয়োজিত করে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কাজে লেগে যান ওই ইউপি চেয়ারম্যান। সপ্তাহ খানেক আগে বাঁধের কাজ শেষ হলেও নিয়মিত বাঁধটিতে যাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। বাঁধের যেখানেই সমস্যা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে তিনি শ্রমিক নিয়োজিত করে তিনি তা মেরামত করছেন।
উপজেলার ঘুলুয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শাহীন খান(৩৫) বলেন, ডিসি স্যার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কারণে করে আমরা চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ধান কাটতাম হারতাছি। আর না অইলে বেক জমির ধান অনেক আগেই হানিত তল অইয়া গেলয়।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জের ডিসি স্যারের নির্দেশে উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ২হাজার ৭৭০ হেক্টর বোরো জমির ধান ফসলডুবির হাত থেকে রক্ষায় আমি নিজে দিনরাত উপস্থিত থেকে, পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি বিকল্প বাঁধ (সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের পেছন থেকে ওই ইউনিয়নের কাউনাই নদীর পাড়) পর্যন্ত বাঁধটি নির্মাণ কাজ করিয়েছি। এই বাঁধটি নির্মাণ করায় শুধু চন্দ্র সোনার থাল হাওরই নয়, আশপাশের ছোটবড় আরও বেশ কয়েকটি হাওরসহ অন্তত ১০ হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই বাঁধটিতে আর কোনো সমস্যা হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নাজমুল ইসলাম বলেন, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ২৭৭০ হেক্টর বোরো জমির মধ্যে ২১৬০ হেক্টর ধান কর্তন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর বোরো জমির মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়ার অনুকুলে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে এ উপজেলার ৯০ ভাগ বোরো জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে হাওরের ফসলহানি ঠেকাতে ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন চন্দ্র সোনার থাল হাওরের বিকল্প বাঁধটি নির্মাণ কাজ করিয়েছেন। আমরা(উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও) বাঁধটির নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি।