সুনামগঞ্জে আলীয়া মাদ্রাসার ৬পদে ৪ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ বুধবার দুপুর ০২:২৪, ১৮ নভেম্বর, ২০২০
সুনামগঞ্জে একটি আলীয়া মাদ্রাসার ৬টি শূন্য পদে লোক নিয়োগে অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগসহ সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক,জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,সংসদ সদস্য,প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব,শিক্ষা মন্ত্রণালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও দূর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে পৃথক ভাবে ৪টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীদের দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- জেলার তাহিরপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদ্রাসার ৬টি শূন্য পদে গত ২৭শে অক্টোবর লোক নিয়োগ করা হয়েছে। তাতে সংশ্লিস্ট মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলামের স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে হিসাব রক্ষক পদে,তার চাচাত ভাই সংশ্লিস্ট মাদ্রাসার কমিটির সদস্য তাজিমুল ইসলাম দুলালের আপন ভাই শরিফুল ইসলামকে উপাধ্যক্ষ পদে, ভগ্নিপতি মহিবুর রহমানকে অধ্যক্ষ পদে,মুনতাছির বিল্লাহকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে,শাপলা আক্তারকে আয়া পদে ও আবু আলী সানীকে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ করা হয়।
এঘটনাটি এলাকাবাসীর মাঝে জানাজানি হওয়ার পর স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১৪ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর,দূর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের নিকট পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলীম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া। এরআগে গত ৪ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আলাদা ভাবে আরো ১টি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ভূক্তভোগী। একই তারিখে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বিভিন্ন পদের ৪ জন প্রার্থী সাক্ষরিত আরো একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগকারীরা হলেন- সাইদুর রহমান অপু মিয়া,শবনম আক্তার,রুবিনা আক্তার রুবি ও জাহাঙ্গীর আলম। তারা তাদের অভিযোগের অনুলিপি পাঠান জেলা প্রশাসক,জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,সংসদ সদস্য,প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব,শিক্ষা মন্ত্রণালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও দূর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে।
তাদের অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- সকাল ১০টায় লিখিত পরিক্ষা নির্ধারিত করার পর সেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সাড়ে ১১টায়। এবং মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির স্ত্রী,ভগ্নিপতি ও ছোট ভাইকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ করাসহ বাকি ৩জন লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে ৩০লক্ষ টাকা উৎকোচ। এই অভিযোগ দাখিলের পর ভুক্তভোগী ৪ প্রার্থীর মধ্যে সাইদুর রহমান অপু মিয়া,শবনম আক্তার ও রুবিনা আক্তার রুবি গত ৮ নভেম্বর তাদের সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তুলেন। এবং সাইদুর রহমান অপু মিয়া ১টি ও শবনম আক্তার তার ননদ রুবিনা আক্তার রুবি দুজন মিলে ১টি লিখিত অভিযোগসহ পৃথক ভাবে ২টি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমা দেন। সেই লিখিত অভিযোগে তারা ৩জন উল্লেখ করেন- তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদ্রাসার লোক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ দূর্নীতি নিয়ে গত ৪ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সেই অভিযোগ পত্রে তারা ৩জন সাক্ষর দেয়নি।
এব্যাপারে তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের লাইব্রেরীয়ান সাজিদুর রহমান সাজু বলেন- রুবিনা আক্তার রুবি আমার ছোট বোন আর শবনম আক্তার আমার স্ত্রী। তারা দুজন দুইটি পদের প্রার্থী ছিল। কিন্তু তাদের সাক্ষর কে বা কারা নকল করে অভিযোগ দিয়েছে জানিনা,তাই এর সুবিচার চেয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পাল্টা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলীম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন- আমি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ার পরও মাদ্রাসার লোক নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানিনা। তাছাড়া বেশির ভাগ আবেদনকারী প্রার্থীদেরকে দেওয়া হয়নি ইন্টাভিউ কার্ড। এবং তাহিরপুর রেখে সিলেট আলীয় মাদ্রাসায় গিয়ে পরিক্ষা নেওয়ার কারণে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা নেওয়া হয়নি। আমাদের মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম সবাইকে ম্যানেজ করে তার লোকজনকে নিয়ে গোপনে মিটিং করে নিজের স্ত্রী,ভাই ও ভগ্নিপতিকে নিয়োগ দিয়েছে। আর অন্যদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে জানতে পেরেছি। তাই জরুরী ভিত্তিতে এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলীম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন- আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়,যারা পরিক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমান করেছে তাদেরকেই চাকুরী দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার অনিয়ম বা দূর্নীতি হয়নি। কিছু সংখ্যক লোক তাদের স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে অহেতুক হয়রানীর চেষ্টা করছে।
তবে দায়েরকৃত একাধিক অভিযোগের ব্যাপারে জানতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ‘র মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন- তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলীম মাদ্রাসার লোক নিয়োগে অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হওয়ার বিষয় নিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি,এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।