বর্ষায় কাটে তাদের নির্ঘুম রাত,শীতে মুখে আসে হাসি
রমেশ চন্দ্র সরকার,রাজারহাট(কুড়িগ্রাম) শুক্রবার সন্ধ্যা ০৭:২৫, ২৭ নভেম্বর, ২০২০
নদীর এ কূল ভাঙ্গে, ও কূল গড়ে এইতো নদীর খেলা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে তিস্তাকে নিয়ে লেখা হয়নি। তিস্তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে গান,গল্প, ছড়া, কবিতা, কাব্য,নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি। এমনকি তিস্তাকে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামও হয়েছে। তাতে তিস্তার কি আসে যায়। বরং আপন মহিমায় তিস্তা নিজেকে উদ্ভাসিত করেছে। বলছি তিস্তা নদীর কথা।
শুষ্ক মৌসুমে মৃত প্রায় তিস্তা বর্ষায় যৌবনে ফিরে আগ্রাসী হয়ে উঠে। তখন তিস্তা পাড়ের মানুষ নীড় হারানোর পদধ্বনি শুনতে পেয়ে তাদের আবেগীমন ডুকরে কেঁদে উঠে। এ সময় চারিদিকে শুধুই হাহাকার। একদিকে নদী ভাঙ্গোনে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি অন্যদিকে বন্যায় ভাসিয়ে যাচ্ছে সর্বোস্ব আর এভাবেই কেটে যায় তাদের নির্ঘুম রাত। তিস্তায় করাল গ্রাসে তিস্তা পাড়ের আতঙ্কিত মানুষের আর্তনাদে সরকার কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। বর্ষা আসে বর্ষা চলে য়ায়। এভাবে কেটে যায় বহু বছর কিন্তু তাদের ভাগ্য সেখানেই থেমে থাকে। নদী গর্ভে কত যে ভিটেমাটি হারিয়ে গেছে, ভেসে গেছে কত বাড়িঘর,নিশানা মুছে গেছে কত এলাকার, অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মানুষ আর যাযাবর হয়েছে কত যে মানুষ তার ইয়ত্তা নেই। তাদের শুধু একটি চাওয়া নদী খনন করে নাব্যতা ফিরে এনে, নদী শাসনের মাধ্যমে বসতভিটে রক্ষা করা। এই আশার উপর ভর করে কেটে যায় দিনের পর দিন।
কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে (শীতে) তিস্তার বুকে জেগে উঠা চর গুলো অনেকটা প্রাণ ফিরে পায়। দেখে যেন মনে হয়,এক সময়ের যৌবনা তিস্তা বৃদ্ধ পেরিয়ে আবার কৌশোরে পদার্পণ করেছে। তবে নদী হিসেবে নয়, ফসলের মাঠ হিসেবে। এ সময় তিস্তার বুকে জেগে উঠা ধুধু বালুচরে দেখা যায় সবুজের হাতছানি। শিক্ষক রুহুল আমীন জানান তিস্তার পাড়ের মানুষের দুঃখভরা জীবনে শীত যেন এক আশার প্রদীপ। এখানে চাষ হয় ধান,আলু ,ভুট্টা,কুমড়া,তিল, তিসি,রসুন,পিয়াজ , বাদাম ও শাকসবজি । দেখে যেন মনে হয় প্রকৃতি আপন মহিমায় নিজেকে সাজিয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যস্ত কৃষাণ কৃষাণিদের পদভারে মুখরিত থাকে তিস্তার চরাঞ্চল গুলো। এ যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। শীতে ফিরে আসে কৃষকের মুখে হাসি। শীতের পড়ন্ত বিকালে যখন গাঢ় লাল সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে, তিস্তার বুকে ফসলের সবুজ পাতা গুলো কুয়াসার আলীঙ্গনে শিউরে উঠে তখন কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে–
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।
কিন্তু গবেষকদের ভিন্ন কথা, বৈশ্বিক জলবায়ু ও উজানে বাঁধ নির্মানের ফলে তিস্তা মরুকরণের দিকেই এগুচ্ছে।