হারিয়ে যাওয়া ছেলের শরীরের চিহ্ন ৭০ বছর পরও ভোলেননি শতবর্ষী মা
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ০২:৫৯, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
পড়ালেখা করতে ১০ বছর বয়সে চাচার সঙ্গে নওগাঁর আত্রাইয়ে গিয়ে হারিয়ে যায় আব্দুল কুদ্দুছ মুন্সি। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও তার সন্ধান পায়নি। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে দীর্ঘ ৭০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সেই ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন তার শতবর্ষী মা।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে কুদ্দুছের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে প্রায় সাত দশক পর মা-ছেলের দেখা হয়।
মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন ছেলে। আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাও। এ দৃশ্য দেখে গ্রামের উপস্থিত নারী-পুরুষের চোখে পানি চলে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলের নেছা ছেলেকে লেখাপড়া করাতে নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের আব্দুল আউয়াল মিয়ার সঙ্গে নওগাঁর আত্রাইয়ে পাঠান। সেখানে গিয়ে ১০ বছরের কুদ্দুছ হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাননি আউয়াল মিয়া। কুদ্দুছকে ছাড়াই গ্রামের বাড়িতে ফিরেন তিনি। কুদ্দুছের পরিবারকে জানান হারিয়ে যাওয়ার কথা।
বর্তমানে তিনি তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক। বড় ছেলে রাজ্জাক ইরাকে ও মেজো ছেলে জান্নাত সৌদি আরবে থাকেন। ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল থাকেন বাড়িতেই। এছাড়া পাঁচ মেয়ের সবাকেই বিয়ে দিয়েছেন কুদ্দুছ-শুরুজ্জাহান দম্পতি।
এদিকে, ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া সেই আব্দুল কুদ্দুছ মুন্সি আজ ৮০ বছরের বৃদ্ধ। গত ১২ এপ্রিল নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এম কে আইয়ূব নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুছ মুন্সির একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেন। সেই ভিডিওতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুছ। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা ও নিজ গ্রামের নাম বলতে পারেন।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নবীনগরের বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন।
ভিডিওর সূত্র ধরে গত ৫ সেপ্টেম্বর কুদ্দুছের গ্রামের কয়েকজন আইয়ূবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা সেখানে গিয়ে কুদ্দুছের সঙ্গে ভিডিওকলে মায়ের কথা বলিয়ে দেন। হাতে কাটা চিহ্ন দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন মা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুদ্দুছ মুন্সি নিজের ছেলে ও তার স্ত্রীদের নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বোন ঝরনার বাঞ্ছারামপুরের আশ্রাফবাদ গ্রামের বাড়িতে আসেন।
কুদ্দুছ মুন্সির বোন ঝরনা বেগম বলেন, ‘আমার মা সবসময় বলতেন, একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন। আমরা ভাইকে ফিরে পেয়েছি।’
আব্দুল কুদ্দুছ মুন্সি বলেন, ‘সবসময় মনে মনে মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি। বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মায়ের সন্ধান পাবো।’
তিনি বলেন, ‘মায়ের বুকে ফিরতে পেরে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। বাকি জীবনটা মায়ের সঙ্গেই কাটাবো।’