নৌকার বিরোধিতাকারীরা ভবিষ্যতে নৌকা পাবেন না
Alauddin Islam রবিবার দুপুর ০৩:৩৮, ১ এপ্রিল, ২০১৮
স্থানীয় নির্বাচনে দল ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব নেতা ও সংসদ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন, তাদের ভবিষ্যতে নৌকা দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অনেকটা উষ্মা প্রকাশ করে এও বলেছেন, আরও বেশি করে গ্রুপিং করুক নেতারা!
শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গ্রুপিং-লবিংয়ে জড়িত নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দলের সর্বস্তরে কোন্দল ও বিদ্রোহের মাত্রা বেড়েছে। ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যায়। এজন্য ভরাডুবি হয় দলের সমর্থিত প্রার্থীদের। এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত শনিবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
সারাদেশে কারা দলের গ্রুপিংয়ে জড়িত আছেন, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাকে প্রধান করে চার যুগ্ম সাধারণকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দলীয় কোন্দল নিরসনে কাজ করবেন। এছাড়া, আগামী মে মাসে বার কাউন্সিল নির্বাচন দেখভাল ও তদারকি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভায় দলীয় কোন্দলের প্রসঙ্গ তুলে শুরুতে বক্তব্য রাখেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। এরপর বৈঠকজুড়ে দলের বিভিন্ন স্তরে কোন্দল নিরসনের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করেন প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচনেও কোন্দল ও বিদ্রোহের কারণে ভরাডুবি হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও কোন্দলের কারণে পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ জানতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় অনেক নেতাই এ বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
পরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহর নেতৃত্বে এ কমিটিতে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মো. আব্দুর রহমান।
কমিটিকে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দলীয় প্রধানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের যোগ্যতা অর্জন করায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদানের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান। পরে একে একে এ প্রসঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, এসএম কামাল হোসেনসহ উপস্থিত বেশিরভাগ নেতা।
সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, কোন তারিখে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ হয়নি। কারণ, আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি সরকারি সফরে লন্ডন, অস্টেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করবেন। তবে আগামী ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিন এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হতে পারে বলেও সভায় আলোচনা হয়।
সভাসূত্রে দাবি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান সভায় ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন হলে সংগঠন গতিশীল হয়। নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। তাই ছাত্রলীগের সম্মেলন যথাসময়ে হওয়া উচিত।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্মেলন মে মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই যেন করা হয়।’
এ সময় মে মাসের ১১ তারিখে ছাত্রলীগের সম্মেলন করা যায় কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলন, ছাত্রলীগকেই তারিখ নির্ধারণ করতে দিলে ভালো হয়।’
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোজার আগেই যেন সম্মেলন হয়। কারণ, মে মাসের ১৭ তারিখে রোজা শুরু।’