ঢাকা (সকাল ৯:১৬) রবিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জুমার খুতবা আরবিতে না বাংলায়? -হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

ইসলাম ধর্ম ২৫০ বার পঠিত

মেঘনা নিউজ ডেস্ক মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock শনিবার সকাল ০৮:৫৬, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, আপনাদের সামনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তা এমন একটি বিষয়, যা আমাদের সবারই জানা প্রয়োজন। বিষয়টি হলো জুমার খুতবা যে কারণে আরবিতে পড়তে হবে সেই বিষয় নিয়ে আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।

 

১. খুতবার আরবি প্রচলন রাসুল (সা.) এর যুগে ছিল। আরবি ছাড়া ভিন্ন ভাষায় খুতবা দেয়ার কোন রেওয়াজ রাসুল (সা.) এর যুগে ছিল না। এমনকি এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) থেকে কোন হাদিসে ও বর্ণিত নয়।

 

২.খুলাফায়ে রাশিদ্বীন, সাহাবায় কেরাম (রা.) তাবিয়ীন ও তবে-তাবিয়ীন (রা.) এর যুগেও কোথাও আরবী ছাড়া ভিন্ন ভাষায় খুতবা দেয়ার প্রচলন ছিল না।

 

৩. ফেক্বহের বিখ্যাত মুজতাহিদের যুগে বা ফেক্বাহ সঙ্কলনের যুগে খুতবা আরবী ছাড়া ভিন্ন ভাষায় দেয়া হতো না।

 

৪. পরবর্তি হাদিস সঙ্কলনের যুগেও খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া হতো। হাদিসের প্রসিদ্ধ ইমাম বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান যুগ স্রেষ্ট মুহাদ্দিসগণ জুম্মার দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনার জন্য ভিবিন্ন অধ্যায় তৈরী করলেও খুতবার ভাষা কেমন হবে। এমন অধ্যায় তৈরী করার জরুরত মনে করেন নি।

 

৫. রাসুল (সা.) দ্বীন শেখা ও শেখানোর লক্ষে আরবী ছাড়াও অনারবী ভাষা শেখার প্রতি উৎসাহিত করছেন। খুতবার বেলায় কোথাও এমন উৎসাহ দান পরিলক্ষিত হয় না।

 

৬. খুতবার যেমন শাব্দিক অর্থ বয়ান তেমনি ইহার পারিভাষিক অর্থ রয়েছে। যেমন কোরআনের শাব্দিক অর্থ পড়া কিন্তু কোরআনের পারিভাষিক অর্থ আল্লাহ তা’আলার কিতাব পড়া অন্য কোন বই পড়া বুঝায় না। আজান মানে হচ্ছে এলান পরিভাষায় সালাতের জন্য এলান করা। একইভাবে পারিভাষিক অর্থে খুতবা বলতে জুম্মা, ঈদ ইত্যাদির খুতবাকে বুঝায় যেটা এসব সালাত শুদ্ধ হওয়ার সাথের সংশ্লিষ্ট।

 

৭. খুতবা সব মুসল্লির শুনা নিশ্চিত করতে সালাতের আগে নিয়ে আসা হয়েছে যেটার দ্বারা নামাজেরই অংশ বুঝায়। সালাতের প্রত্যেক রুকন আরবী। কাজেই জুম্মার খুতবা ও আরবীই হবে।

 

৮. খুতবা শুনার জন্য সব মুসল্লির উপস্থিত নিশ্চিত করতে খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সময়ে ২য় আজানের প্রচলন করা হয়েছে।

 

৯. খুতবা শুনা প্রসঙ্গে নাজিল হওয়া আয়াতে, আল্লাহ তা’আলার হুকুম তোমরা নিরব থাক এবং মনযোগ দিয়ে শুনার নির্দেশ থাকলে ও খুতবা বুঝার জন্য বিশেষ কোন নির্দেশ নেই।

 

১০. খুতবাকে কোরআন ও হাদিসে জিকির বলে পরিচয় করা হয়েছে। জিকির আরবীতে হওয়াই উচিত।

 

১১. কোরআন পড়া আর ভিন্ন বই, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি পড়ার ভিতর বিশাল ব্যবধান রয়েছে। কোরআনকে অন্য বইয়ের মতো শুধু চোখ বুলিয়ে পড়লে অবশ্যই চোখ বুলানের সাওয়াব হবে কিন্তু কোরআনকে তালাফ্ফুজ করে পড়ার বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। তেমনিভাব খুতবা ভিন্ন ভাষায় দিলে ওয়াজ নসিহতের সাওয়াব হয়ে যাবে কিন্তু আরবী খুতবার বিশেষ উদ্দেশ্য বাকি থেকে যাবে।

 

খুতবা ও সাধারন ওয়াজ নসিহতের মাঝে পার্থক্য:

 

যারা খুতবাকে ওয়াজ নসিহতের সাথে তুলনা করে ভিন্ন ভাষায় খুতবা দেয়া জায়েজ মনে করেন। তাদের কাছে প্রশ্ন। শরী’য়তে ভিবিন্ন বিষয়ে ছাড় (রুখসত) দেয়া আছে। যেমন সফরের হালতে কসর, ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম, জুম্মার পরিবর্তে জোহর।

 

খুতবার বেলায় এমন (রুখসত) ছাড়ের কথা কি শরীয়তে আছে? অবশ্যই নেই। যদি খুতবার উদ্দেশ্য শুধু ওয়াজ নসিহতই হতো তাহলে রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে ক্ষেত্র বিশেষ এটি ছাড়ার ও অনুমতি দিতেন। বরং জুম্মার ক্ষেত্রে (রুখসত) ছাড় হচ্ছে। কোন কারনে জুম্মা পড়তে না পারলে জোহর পড়বে। এই কন্সেপশন থেকে বুঝা যায় জুম্মার নামাজের সাথে খুতবা অঙ্গাঙ্গিভাবে মিলিত। যেটা সালাতের বিশেষ অংশ বুঝায়।

 

ওয়াজ নসিহত বসে বসে করলে হয়ে যায়। এমনকি রাসুল (সা.) নিজেই বেশিরভাগ সময় বসে বসে ওয়াজ নসিহত করছেন ও দ্বীনি তা’লীম দিয়েছেন। কিন্তু জুম্মার খুতবা বসে দেননি। এমনকি বসে দেয়া যাবেও না। কাজেই ওয়াজ নসিহত আর জুম্মার খুতবার মাঝে কিছুটা হলে ও তফাত পরিলক্ষিত।

 

জুম্মার খুতবা যদি শুধু শুধু ওয়াজ নসিহত উদ্দেশ্য হতো, তাহলে শহর থেকে গ্রামের লোকজনদের জন্য শিখানোর গুরুত্বটা বেশি থাকার কথা। কারন গ্রামের লোকজন সাধারনত কম জানা-শোনা লোক হয়। অথচ গ্রামে জুম্মা পড়া জায়েজ নেই বলে ইসলামি ফেক্বহের সিদ্ধান্ত। এখানে খুতবা ও সাধারন ওয়াজ নসিহতের পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।

 

সর্বাপরি, হাদীসে জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সুতরাং এটা সহজেই অনুমেয় যে , আরবী ভাষা ছাড়া খুতবা অন্য ভাষায় দেওয়া বৈধ নয়।

 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমিন।

 

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT