গৌরীপুরে স্কুলের জমি দখলের অভিযোগ;প্রধান শিক্ষক শোকজ
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ বুধবার সন্ধ্যা ০৭:১৩, ৬ জুলাই, ২০২২
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের এসএমসির সাবেক সদস্য কামাল হোসেন।
অভিযোগের পর স্কুলের জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের পূর্ব পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যান তিনি। এ কারনে প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য নির্দেশ দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন।
জানা গেছে, ২৩ জুন স্কুলের এসএমসির সাবেক সদস্য কামাল হোসেনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের জমির সীমানা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ২৯ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিসে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় প্রধান শিক্ষক মাজহারুল আনোয়ার অসুস্থতাবোধ করায় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ১৮ জুলাই আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত শুক্রবার (১ জুলাই) বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শন শেষে ওইদিন নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য লিখিত নির্দেশ দেন ও প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেন।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির সীমানা নিয়ে ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষক এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসের সাথে বিরোধ হয় বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা সাদেকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম দুই ব্যক্তির। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের ঝগড়া-বিবাদের জের ধরে মামলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তারের হস্তক্ষেপে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিরোধটি নিস্পত্তি হয়। এসময় স্কুলের সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করা হয়।
সম্প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস সেই সীমানা পিলার সরিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। এ ঘটনায় গত ২৩ জুন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য কামাল হোসেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ জুলাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান। এসময় শিক্ষা অফিসারের সামনেই প্রধান শিক্ষক অভিযোগকারী কামাল হোসেনসহ উপস্থিত অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, জায়গা দখলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছেন স্কুলের এসএমসি কমিটি। আমি শোকজের চিঠি পাইনি, চিঠি না পেয়ে মন্তব্য করতে পারবো না।
স্কুলের এমএমসি সভাপতি মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান শিক্ষক নয় এসএমসি কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন সাংবাদিকদের জানান, স্কুলের পেছনের অংশে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধটি ২০১৮ সালে নিস্পত্তি হয়েছিল। এই সময়ে স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য একাধিকবার তাগিদ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারনে তা নির্মাণ করা হয়নি। অভিযোগের পর নিষেধ করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে হঠাৎ তড়িঘড়ি করে নিজস্ব উদ্যোগে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ।
এ ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে ও নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।