ঢাকা (দুপুর ১২:৩০) শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত

আর ভয় নয়, চলুন জানি বাঁশ দিয়ে তৈরি কিছু লোভনীয় খাবার সম্পর্কে

আরিফুল ইসলাম আরিফুল ইসলাম Clock সোমবার বেলা ১২:২৬, ২৯ জুন, ২০২০

বাঙ্গালীরা যত রকমের খাবার তৈরি করতে পারে, পৃথিবীর অন্য কোথাও তা সম্ভব না। তবে এসব চিরাচরিত খাবারের পাশে বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার।

আজকাল বড় বড় রেস্টুরেন্টে গেলেও চোখে পড়ে সেসব খাবারের চাহিদা। তবে সেসব খাবারের ধরণ একই থাকলেও স্বাদে রয়েছে অনেকটা ভিন্নতা।

তাই এসব লোভনীয় খাবারের আসল স্বাদ পেতে যেতে হবে প্রধানত পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট বা রাজশাহীতে বসবাস করা নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে। আজ জানাবো তাদের বিশেষ কিছু খাবার সম্পর্কে।

ব্যাম্বু চিকেন
পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে ‘ব্যাম্বু চিকেনে’র স্বাদ না নিলে ভ্রমণটাই বৃথা। কড়াই নয়, ব্যাম্বু চিকেন রান্নার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া চলে বাঁশের ভিতরেই। কাঁচা বাঁশের দারুণ ফ্লেভার বিমোহিত করবে যে কোনো ভোজনরসিকদের।

জুমচাষ নির্ভর পাহাড়ের অধিবাসীরা ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর মজাদার স্বাদের কারণেই বাঁশের ভিতরে রান্না করে থাকে। মুরগির মাংসে পাহাড়ি মশলা মিশিয়ে সাবারাং পাতার মিশ্রণে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের ভিতর। এরপর বাঁশের মুখ বন্ধ করে দেয় কলাপাতার মাধ্যমে। কয়লার ঢিমে আঁচে চলে রান্না।

তবে এক্ষেত্রে তারা কাঁচা বাঁশ নিয়ে থাকে, কারণ শুকনা বাঁশ খুব দ্রুতই পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। ফলে ভিতরে রান্না কাঁচাই থেকে যাবে। সুঘ্রাণ ও লোভনীয় স্বাদের কারণে পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় এই ব্যাম্বু চিকেন। শুধু চিকেনই নয়, অনেকে তাদের অন্যান্য রান্নাও বাঁশের চোঙেই করে থাকে স্বাদের ভিন্নতার কারণে। বিশেষ করে ত্রিপুরা ও মারমা নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের ভিতরে এখনো বিপুল হারে বাঁশের চোঙে রান্নার প্রচলন দেখা যায়।

 

কেবাং
‘কেবাং’ মূলত রান্নার একটি ধরণ। লম্বা বাঁশের খোলের ভিতরে তেল-মশলা দিয়ে সাধারণত শূকরের মাংস ঝলসানো হয়। শূকরের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম মাছ কিংবা মাংস দিয়েও রান্না করা যায় কেবাং। তবে জলন্ত আগুনের বদলে কয়লার আঁচে রান্না করা হয় যাতে মাছ বা মাংসে মশলা ঢুকে ভালভাবে সিদ্ধ হয়।

 

করেইর চিনচু
মণিপুরীদের বিশেষ খাবার ‘করেইর চিনচু’। পূর্বে মণিপুরীদের ভিতর মাংস খাওয়ার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ মণিপুরীই শাকাহারি। ফলে প্রায় সবাই বাড়ির পাশের জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে। তাদের উৎপাদিত সেসব সবজির মধ্যে তকপানিকম, নিয়াঙপা, ইকাইতাপি, ফাকপই, ফাতিকম, নুংশিহজক, কেলিকদম, লংচাক, নেন্নাম উল্লেখযোগ্য।

এগুলোকে তারা একত্রে ‘মারৈ’ বলে। করেইর চিনচু শুকনা মাছ, ভেজে রাখা চাল আর মারৈ দিয়ে তৈরি করা হয়। ঝালপ্রিয় মানুষের কাছে এই খাবার খুবই জনপ্রিয়, কারণ এটা রান্নার সময় অধিক ঝাল দেওয়া হয় খাবারকে সুস্বাদু করতে। বিকেলের নাস্তায় করেইর চিনচু মণিপুরীদের কাছে অত্যাধিক মুখরোচক খাবার।

 

হেবাং
চাকমাদের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় হেবাং উল্লেখযোগ্য। মাছের শুঁটকি তাদের অনেক পছন্দের খাবার। বিভিন্ন রকম শুঁটকি দিয়ে তাদের বিশেষ রন্ধন কৌশলে তৈরি করে ‘হেবাং‘। একে ‘সুগুনি হেবাং’ও বলা হয়ে থাকে।

 

মুন্ডি
বান্দরবানে শুধুমাত্র মারমারাই নয়, স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছেও বিপুল জনপ্রিয় খাবার ‘মুন্ডি’। টক-ঝাল স্বাদে ভিন্নধর্মী খাবার মুন্ডি সেখানকার তরুণ-তরুণীদের কাছেও বেশ পছন্দের খাবার। খাবারের চাহিদা অনুসারে সেখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেস্তোরা। প্রথমে চাল ভিজিয়ে সেগুলো নরম করে নেওয়া হয়।

তারপর ছোট ছিদ্রযুক্ত চালুনীর সাহায্যে নুডুলস আকৃতির মুন্ডি তৈরি করা হয়। সেগুলোকে সিদ্ধ করে মরিচ, মশলা, ধনেপাতা, চিংড়ি ও শুঁটকি দিয়ে পরিবেশন করা হয় মুন্ডি। তবে পরিবেশনের সময় এর সাথে মাছের স্যুপ বা ঝোলও দেওয়া হয়। সাথে থাকে তেঁতুল বা লেবু, যা খাওয়ার সময় মিশিয়ে নিতে হয়। তবে মায়ানমার ও চীনের নুডুলসের কারণে এখন মুন্ডির চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানান রেস্তোরার মালিকরা।

 

বাঁশ কোড়াল
পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসীদের নিকট ‘বাঁশ কোড়াল’ অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার। বাঁশের গোঁড়ার কচি নরম অংশকে বলে বাঁশ কোড়াল। স্যুপ, মুন্ডি, মাছ, মাংস, বিভিন্ন তরকারীতে ব্যবহার ছাড়াও এটা শুধু ভাজি করেও খান অনেকে।

বর্ষার শুরুতেই পানিতে বাঁশের আগা নরম হলে বাঁশ কোড়াল সংগ্রহ করতে হয়। পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়াল পাওয়া যায়। খাদ্যোপযোগী বাঁশের মধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশ উল্লেখযোগ্য।

জাতের পার্থক্যের সাথে সাথে এসব বাঁশের স্বাদেও আসে ভিন্নতা। লোভনীয় স্বাদের কারণে সর্বত্রই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাঁশ কোড়াল। চাহিদার যোগানে সংগ্রহও বেড়েছে অনেক। পার্বত্য এলাকার অনেক নারীরাই জীবিকা অর্জন করে বাঁশ কোড়াল সংগ্রহ করে।

মারমাদের মাঝে এটা ‘মহ্ই’ নামে পরিচিত আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’। চাকমারা একে বলে ‘বাচ্ছুরি’। তবে গাছপালা কমে যাওয়ায় পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপরিকল্পিত জুম চাষ, মাটি খনন, পাহাড় ভাঙনে ঝরনা শুকিয়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে বাঁশ উৎপাদন অনেক হারে কমে গেছে। ফলে চাহিদামত বাঁশ সংগ্রহও সম্ভব হচ্ছে না। বাঁশবন রক্ষণাবেক্ষণে ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে বনবিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে চলেছে।

 

নাপ্পি
কক্সবাজারে বসবাসকৃত বিভিন্ন রাখাইন পল্লীতে সারা বছরই চলে ‘নাপ্পি’ তৈরির ধুম। সাগর থেকে আনা ছোট আকৃতির চিংড়ি, যা রাখাইন পাড়ায় ‘মিম ইছা’ নামে পরিচিত, সেগুলোকে বিশেষ পদ্ধতিতে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় নাপ্পি।

রাখাইন ও অন্যান্য আদিবাসীদের ভীষণ পছন্দের খাবার এই নাপ্পি। প্রায় ৩০ হাজার রাখাইন এই নাপ্পি সংগ্রহ ও বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আদিবাসীরা শুঁটকির মতো নাপ্পিও বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করে, আবার শুধুমাত্র নাপ্পি দিয়েও তৈরি হয় সুস্বাদু ব্যঞ্জন।

সাগর থেকে আনা মিম প্রায় ১২ ঘন্টা রোদে শুকিয়ে ঢেঁকিতে চূর্ণ করা হয়। তারপর আবার ২৪ ঘন্টা শুকিয়ে লবণ ও বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে নাপ্পি বাজারজাত করা হয়। তরকারীতে যেমন লবণের পরিমাণ ঠিক না থাকলে বিস্বাদ লাগে, তেমনি রাখাইন ও বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের খাবারে নাপ্পি না থাকলে স্বাদ পরিপূর্ণতা পায় না তাদের কাছে।

 

বিগল বিচি
খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে তারা বিভিন্ন তরকারীতে ‘বিগল বিচি’ দিয়ে থাকেন। তবে অনেকে ভাজি করেও খেয়ে থাকেন। মূলত এর আলাদা কোনো স্বাদ নেই। দেখতে ছোট ছোট বলের আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত শুঁটকি বা বিভিন্ন মাছ-মাংসে বিগল বিচি ব্যবহৃত হয়। এটি তরকারীতে আলাদা স্বাদ এনে দেয়।

 

থানকুনি পাতার সালাদ
প্রত্যহ খাবারে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদিবাসী খাবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভেষজগুণে ভরপুর থানকুনি পাতার ব্যবহার বিভিন্ন তরকারিতেই দেখা যায়। তবে তাদের সবথেকে পছন্দ থানকুনি পাতার তৈরি সালাদ। শসা, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো দিয়ে তৈরি সালাদ তাদের প্রতিদিনের খাবারের সাথেই পরিবেশন করা হয়।

শুধু স্বাদেই নয়, নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে পাবেন পরিবেশনেও ভিন্নতা। এখনো অনেকে বাঁশের পাত্রেই খাবার পরিবেশন করেন। তাই এসব খাবারের পরিবেশনের বাহার আর গন্ধ যেকোনো মানুষকেই আকর্ষণ করে। তাদের এসব ঐতিহ্যবাহী খাবার বর্তমানে শুধুমাত্র তাদের ভেতরেই নয়, শহরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লোভনীয় ও ভিন্ন স্বাদের এসব খাবার আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT