ভোলায় গ্রাহকদের অর্ধ-কোটি টাকা নিয়ে উধাও নবলোক নামে একটি এনজিও
কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা মঙ্গলবার ১২:০৩, ৫ জুলাই, ২০২২
ভোলার তজুমদ্দিনে “নবলোক” নামের একটি এনজিও ঋণ দেয়ার প্রলোভনে, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
সোমবার (৪ জুলাই) প্রায় অর্ধশত গ্রাহক ঋণের টাকা নিতে এসে অফিসে তালাবদ্ধ দেখেন। পরে গ্রাহকরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তজুমদ্দিন উপজেলার গোডাউন রোডের শ্রমিক কালা চান দাসের বাসা ভাড়া নেয় “নবলোক” নামের একটি এনজিও। গত ২৮ জুন থেকে ওই বাসায় এনজিও-র অফিস চালু করে; এক নারীসহ তিন ব্যক্তি গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন কয়েক লক্ষ টাকা।
ঋণ বিতরণের নির্ধারিত সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রাহক এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখে সন্দেহ হয়। পরে কর্মকর্তাদের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পান। এসময় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা হট্টগোল করতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় তারা থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা “নবলোক” নামের একটি এনজিওর পরিচয় দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের পঞ্চায়েতকান্দি, বাদুরা, খাশের হাট, কালির বাজার, দেওয়ানপুর, চৌমুহনী, সোনাপুরের ইন্দ্রনারায়ন পুর, চাপড়ি, শম্ভুপুরের ভুবন ঠাকুর, গোলকপুর, শিবপুরসহ অন্তত ২৫ টি এলাকায় সমবায় সমিতি গঠন করে। ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে এসব গ্রাহকদের কাছ ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হারে এককালীন সঞ্চয় গ্রহণ করে তারা।
সোমবার (৪ জুলাই) কয়েকটি সমিতিকে ঋণ বিতরণের তারিখ ধার্য্য করে। ঋণের টাকা নিয়ে এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ।
প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান, তারা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ের নামে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। বাসার সামনে টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে পিকেএসএফ’র অর্থায়নে পরিচালিত ঋণ কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির একটি সনদ নম্বরও দেওয়া আছে। সদস্যদের দেয়া পাশ বইতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় লেখা রয়েছে খুলনা জেলা সদরের নিরালা রোডে।
আড়ালিয়ার বাদুড়া গ্রামের ভুক্তভোগী মোঃ হান্নান জানান, আমাকে এক লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা সঞ্চায় নেয়। আজ ঋণের টাকা নিতে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। আমাদের এলাকায় সমিতি গঠন করে আমার সাথে আরও প্রায় ২০-২৫ জনের কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়।
বাড়ি মালিক কালা চাঁদ দাস জানান, এক সপ্তাহ আগে এনজিও নবলোক-কে বাসা ভাড়া দেই। কিন্তু তাদের সাথে আগামী ৬ জুলাই এক বছরের অগ্রিম ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে লিখিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা। রোববার সন্ধ্যার পর বাসায় তালা লাগিয়ে তারা নিরুদ্দেশ হন। ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাসায় উঠার সময় তাদের কাছ থেকে কোন পরিচয়পত্র রাখা হয়নি বলে জানান তিনি।
তজুমদ্দিন থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম জিয়াউল হক বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। প্রতারকদের বিষয়ে সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারেনি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মরিময় বেগম বলেন, নবলোক নামে এনজিও’র কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয়নি। এই এনজিওর কোন তথ্য জানা নেই। টাকা লেনদেন বিষয়ে এলাকার কোন জনপ্রতিনিধিও আমাদের অবহিত করেনি।