সুনামগঞ্জে দুই নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গন,নিঃস্ব সহশ্রাধিক পরিবার,দেখার কেউ নেই
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ বৃহস্পতিবার দুপুর ০১:৫৬, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০
সুনামগঞ্জের ২টি পাহাড়ী খড়স্রোতা নদী সুরমা ও খাসিয়ামারা। এই নদী ২টি সুদীর্ঘকাল থেকে মানুষের চাষাবাদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানান ভাবে সহযোগীতা করে আসছিল জেলাবাসীকে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীও তার রুপ পাল্টাতে শুরু করেছে।
গত কয়েক বছর যাবত সুরমা ও খাসিয়ামারা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আর এই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়েগেছে কয়েক হাজার পরিবার। বর্তমানে ভাংগনের কবলে রয়েছে আরো শতশত একর চাষাবাদের জমি,হাট-বাজার,রাস্তা-ঘাটসহ বসত ঘরবাড়ি। তাই নদীর তীরে বসবাসকারী অসহায় মানুষগুলো প্রতিদিন নদী তীরে বসে করছে শুধু আহাজারি। কারণ চোখের সামনে তাদের লক্ষলক্ষ টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা কিছুই করতে পারছেনা। শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলছেন। কিন্তু তাদের এই সমস্যা দেখার মতো কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাছিমপুর,নৈনগাঁও,মংলারগাঁও, মুরাদপুর ও সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর,টিলাগাঁও সহ প্রায় ২০টি গ্রামের শতশত একর জমি ও বসতবাড়ি ইতিমধ্যে খড়স্রোতা সুরমা ও খাসিয়ামারা নদী গ্রাস করে ফেলেছে। আর অবশিষ্ট অংশ রক্ষা করার জন্য এলাকার অসহায় মানুষ বাঁশ,গাছ ও বনসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে নদীর তীরে বাঁধ দিয়েছেন। তারপর শেষ রক্ষা হচ্ছেনা। ভয়াবহ নদী ভাংগনের কবলে পড়ে অনেকের সাজানো স্বপ্ন ও সংসার ভেংগে গেছে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ্যরা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বসতবাড়িতে। অনেকেই আবার কোন উপায় না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার গড়েছেন খোলা আকাশের নিচে। তাই বর্তমান সরকারের কাছে পূনবার্সন ও আশ্রয়ের দাবি জানিয়েছেন নদী ভাংগনে ক্ষতিগ্রস্থ শতশত অসহায় মানুষ।
এব্যাপারে মাছিমপুর গ্রামের সুনীতি দাস,লতা দাস,কমলা দাস বলেন- রাক্ষুসে সুরমা নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের বাড়িতে পৌছে গেছে। বসতঘরের ভিতরে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই মালামাল অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছি। অনেক কষ্টে তৈরি করা আমাদের বসবাসের একমাত্র ঘরটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। আমরাতো সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের এই সমস্যা দেখার মতো কেউ নেই।
দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন- আমার ইউনিয়নের ৮-১০টি গ্রামের বেশির ভাগ অংশই নদী ভাংগনের কবলে পড়েছে। প্রায় শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। আমাদের কাছে সরকারি ঘরের বরাদ্দ আছে কিন্তু ঘর প্রদানের ক্ষেত্রে নীতিমালার জটিলতা থাকার কারণে সবাইকে ঘর দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বানু বিবি,সিরাজ মিয়া,নানু মিয়া,দুলাল মিয়া,ফিরোজ আলীসহ আরো অনেকেই জানান- গত কয়েক বছর যাবত পাহাড়ী খড়স্রোতা খাসিয়ামারা নদীর ভয়াবহ ভাংগনের কবলে পড়ে তাদের দোকানপাট,বসতবাড়ি,গাছ-পালা ও ফসলি জমি সবকিছু হারিয়ে গেছে। আশে পাশের এলাকাগুলোও বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। কিন্তু নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রসিদ বলেন- খাসিয়ামারা নদীর ভয়াবহ ভাংগনের ব্যাপারে সংশ্লিস্ট প্রশাসনকে আমি অনেক বার অবগত করেছি। শীগ্রই এব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে আলীপুর ও টিলাগাঁওসহ আরো অনেক গ্রাম হারিয়ে যাবে। বদলে যাবে দোয়ারাবাজার উপজেলার মানচিত্র।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন- নদী ভাংগনে ঘরবাড়ি হারিয়ে যারা নিঃস্ব হয়েছেন তাদেরকে খাস জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়াসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তবে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের মধ্যে কেউ খাস জমি বন্দোবস্ত পাবে না। উপজেলা সদরের বাহিরে খাসজমি পাওয়া গেলে সেখানে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।