নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই চলছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ধর্মপাশা শাখার কার্যক্রম
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) মঙ্গলবার বিকেল ০৫:৫৫, ১০ নভেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো.রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে এসে অভিযোগকারী সুরে আলম (৩৫) নামের এক কৃষককে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।.বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রাজীব সাহা এই হুমকি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই কৃষকের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামে।
এ ঘটনায় ওই কৃষক প্রতিকার চেয়ে গতকাল সোমবার (৯নভেম্বর) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ধর্মপাশা শাখা কার্যালয় ও ভূক্তভোগী ওই কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার আতকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সুরে আলমের নিজ গ্রামে তাঁর সাতটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরগুলোতে গত দুই বছর ধরে তিনি মাছ চাষ করে আসছেন। উপজেলায় এবার পর পর চারবার বন্যা কবলিত হওয়ায় ওই পুকুরগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় কৃষক সুরে আলম গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে কৃষি ব্যাংকের ধর্মপাশা শাখায় মৎস্য চাষে প্রণোদনা খাতে তিন লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। সপ্তাহ খানেক পর ওই কৃষকের কাছে এই ঋণ বাবদ ২০হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন কৃষি ব্যাংকের ধর্মপাশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো.রিপন মিয়া। ওই কৃষক ঘুষের ২০হাজার টাকার মধ্যে ১০হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু অবশিষ্ট ১০হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে ঋণ দেওয়া হয়নি। ঋণ না পাওয়ায় ঘুষের টাকা ওই কৃষক ব্যবস্থাপক রিপন মিয়ার কাছে ফেরত চাইলে ওই ব্যবস্থাপক ১০হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় গত ৮অক্টোবর কৃষক সুরে আলম বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ঘুষের ১০হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ও তাঁকে ঋণ না দেওয়ায় বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে গত রোববার (৮নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কৃষি ব্যাংকের ধর্মপাশা শাখায় আসেন কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রাজীব সাহা। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে রাজীব সাহা অভিযোগকারী কৃষক সুরে আলমের মুঠোফোন নম্বরে কল করে তাঁকে ধর্মপাশা শাখায় আসতে বলেন। কথা প্রসঙ্গে রাজীব সাহা ঘুষের টাকা নিয়ে আর কথা না বলতে ও ঘুষের টাকার দেওয়ার ঘটনাটি ভুলে যাওয়ার জন্য ওই কৃষককে অনুরোধ করেন এবং আগামী দুইদিনের মধ্যে মৎস্য চাষের ওই ঋণ দেওয়ার ব্যাপাকে শতভাগ আশ্বাস দেন।তবে এ জন্য অভিযোগটি প্রত্যাহার করাসহ ও ঘুষের টাকা দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা ছিল বলে অভিযোগকারী ওই কৃষককে লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়।এতে ওই কৃষক অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁকে ক্রিমিনালি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রাজীব সাহা। এ অবস্থায় ওই কৃষক ব্যাংক থেকে দ্রুত সটকে পড়েন।
কৃষক সুরে আলম বলেন,ব্যাংক কর্মকর্তা রাজীব সাহা আমার কাছে ১০হাজার টাকার বিষয়টি মাফ দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি আমাকে ঋণ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।কিন্ত তার কথামতো লিখিত কাগজে স্বাক্ষর না করায় তিনি আমাকে ক্রিমিনালির মামলায় জড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।এ ঘটনায় আমি আতঙ্কিত। বিষয়টি নিয়ে আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
ধর্মপাশা কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মো.রিপন মিয়া বলেন, ওই কৃষকের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। তাঁর কাগজপত্র সঠিক ছিলনা বলেই তাঁকে ঋণ দেওয়া হয়নি।
কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রাজীব সাহা বলেন, কৃষক সুরে আলমকে আমি কোনোরকম হুমকি দিইনি। এটি মিথ্যা ও বানোয়াট।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের মহা ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, কৃষককে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।