ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ শনিবার রাত ০১:০০, ২ অক্টোবর, ২০২১
মসজিদের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমির মাঝে পাঁচ শতক জমি দিতে আপত্তি জানিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষের একের পর এক মামলা জটিলতায় আটকে ছিল ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন নির্মাণ কাজ। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার আপিল খারিজ করে দেয়ায় মসজিদ নির্মাণে দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসন হয়েছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বায়তুল আমান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক
মোঃ আবুল মুনসুর জানান, ২০১৯ সনের ২৮ এপ্রিল গৌরীপুর পৌর শহরে উত্তর বাজার এলাকায় বায়তুল আমান জামে মসজিদের প্রস্তাবিত জায়গায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, স্থানীয় মুসল্লী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর স্থানীয় ব্যবসায়ী আক্কাছ আলী ভূঁইয়া শহরের বাইরে গৌরীপুর সরকারি কলেজের পাশে দেবত্তোর সম্পত্তিতে মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব করে হাইকোর্টে একটি মামলা করে মসজিদ নির্মাণকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। আদালত এ মামলার বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস সরেজমিন তদন্তপূর্বক বর্তমান প্রস্তাবিত স্থানে মডেল মসিজিদ নির্মাণের পক্ষে মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
আদালতে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর এ মামলাটি হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে আক্কাছ আলী তার ভাই মোঃ মাহমুদুল হাসান জলিল ভুইঁয়াকে দিয়ে হাইকোর্টে আরও একটি মামলা দায়ের করান। আদালত সেই মামলাটি খারিজ করে দিলে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। অবশেষে ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের সেই আপিল খারিজ করে দেন। এখন আর মডেল মসজিদ নির্মাণে আর কোন বাঁধা নেই বলে তিনি দাবি করেন আবুল মনসুর।
আবুল মনসুর আরও জানান-মডেল মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুযায়ী দৈর্ঘ্য ১৭০ ও প্রস্থ ১১০ ফুট আয়তনের ৪০ শতক জায়গার প্রয়োজন। বায়তুল আমান জামে মসজিদের নামে ৪০ শতক জায়গা থাকলেও প্রস্থে কিছু জায়গা কম হয়। যে কারণে মসজিদের উত্তর পাশে ১৯ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এরমধ্যে পাঁচ শতক জায়গা আক্কাছ আলীর। আক্কাছ আলী গং পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মামলা দিয়ে মসজিদ নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিলেন।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, আক্কাছ আলী ভূঁইয়া একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বিলাসবহুল বহুতল আবাসিক ভবন, ইটভাটা, রাইসমিল, রড-সিমেন্টের ব্যবসাসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রচুর ভূ-সম্পদের মালিক তিনি। অথচ ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বরাবরে একটি অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন মসজিদের উত্তর পাশে অধিগ্রহণকৃত জায়গার মধ্যে তাঁর পাঁচ শতক জায়গাটি হারালে তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
এদিকে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নে জানা যায়- উত্তর বাজার বায়তুল আমান জামে মসজিদের পাশে যে জায়গাটি আক্কাছ আলী নিজের সম্পত্তি বলে দাবী করছেন, পৌরসভার তথ্যানুযায়ী উক্ত জায়গায় আক্কাছ আলী ও তার ভাই মোঃ মাহমুদুল হাসান জলিল ভুইঁয়ার মালিকানাধীন কোন হোল্ডিং/দোকান বা স্থাপনা নেই।
আক্কাছ আলী ভূঁইয়ার ছোট ভাই ২য় মামলার বাদী মোঃ মাহমুদুল হাসান জলিল ভুইঁয়া সাংবাদিকদের জানান- মসজিদের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমির মধ্যে ১৫.৬২ শতক জায়গার টাকা দিয়ে রেখেছেন, এরমাঝে ৫ শতক জমির দলিল হয়েছে।
স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান- প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য উত্তর বাজার বায়তুল আমান জামে মসজিদের জায়গায়টি সর্বোত্তম। এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন এ স্থানটি নির্ধারণ করেছেন। মসজিদের জমি অধিগ্রহণের জন্য ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এক্ষেত্রে অধিগ্রণকৃত জায়গায় মাত্র ৫ শতক জমির জন্য একের পর মামলা দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল ব্যবসায়ী আক্কাছ আলী ভূঁইয়া গং।
ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুজ্জামান চুন্নু সাংবাদিকদের জানান- উল্লেখিত মডেল মসজিদ নির্মাণে কার্যাদেশ দেয়া হলেও উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় এর কাজ শুরু করা যাচ্ছিলনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন তিনি।