বেহেশতী নারীর গুনাবলী সম্পর্কিত মহানবী (সাঃ) এর বানী
আরিফুল ইসলাম শুক্রবার ১২:৪৪, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
বিভিন্ন হাদীসে জান্নাতী বা বেহেশতী নারীর বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে কিছু হাদীস নিম্নে বর্ণনা তুলে ধরলামঃ
১.হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে মহিলা (১) পাচঁ ওয়াক্ত নামায (নিয়মমত) আদায় করবে, (২) রমযানের রোযা (ঠিকমত) রাখবে, (৩) লজ্জাস্থান হেফাযত করবে এবং (৪) স্বামীকে মান্য করবে, তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, যে দরজা দিয়ে মন চায় সে দরজা দিয়ে তুমি বেহেশতে প্রবেশ কর। [মিশকাত]
২.হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে নারী তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করবে সে বেহেশতী হবে (অবশ্য স্বামীর শরীয়ত বিরোধী কাজে নয়)। [তিরমিযী]
৩.হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার কয়েকজন মহিলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদের মাধ্যমে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে সওয়াবের দিক দিয়ে অনেক অগ্রসর হয়ে গেছে। সুতরাং আমাদের জন্য এমন কোন আমল আছে কি? যা আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদদের আমলের বরাবর হতে পারে? তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলারা নিজের ঘরে দৈনন্দিন কাজকর্ম করলে তা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সমান সওয়াব হবে। [দুররে মনসূর]
৪.হাদীস বর্ণিত আছে যে, দুনিয়ার নেককার মহিলারা যখন বেহেশতে প্রবেশ করবে, তখন দুনিয়ার নেক আমলের বিনিময়ে তারা বেহেশতী হূরদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল হবে। [তাযকেরা]
৫.হযরত উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় বা বাচ্চা প্রসবকালে মারা যায়, সে শহীদের মর্যাদা পাবে। [কানযুল উম্মাল]
৬.হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ মহিলা সর্বশ্রেষ্ঠ যে পুতঃপবিত্র থাকে এবং মহব্বত রাখে অর্থাৎ সতীত্ব বজায় রাখে এবং স্বামীর প্রতি সর্বাধিক ভালবাসা রাখে। [কানযুল উম্মাল]
৭.হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম বেহেশতে গমনকারী ঐ সমস্ত মহিলারা হবে যারা দ্বীনের ব্যাপারে, ধর্মের ব্যাপারে সাহসী অগ্রণী। [মুসনাদে আহমদ]
৮.হযরত সাওবান (রাঃ) বলেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট উপকারী বস্তু হলো (১)যিকিরকারী জিহবা, (২) কৃতজ্ঞতাপরায়ণ অন্তর, এবং (৩) এমন ঈমানদার স্ত্রী যে তার দ্বীনের ব্যাপারে (স্বামীকে) সাহায্যকারিনী। [তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ]
৯.হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার এক গ্রাম্য মহিলা আমার কাছে এসেছিল। তার সাথে দুটি কন্যা সন্তান ছিল। আমি খাওয়ার জন্য তাকে তিনটি খেজুর দেই। সে দুই মেয়েকে দুটি দেয় এবং নিজে একটি নেয়। তার খেজুরটি যখন সে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নেয়, তখন মেয়ে দুটি ঐ খেজুরটিও চায়। ফলে সে তার খেজুরটি দু’ভাগ করে দুই মেয়েকে দিয়ে দেয়। (হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন যে,) পরে যখন এই ঘটনা আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শোনালাম। তখন তিনি ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পাক তার উপর বেহেশত ওয়াজিব করেছেন এবং দোযখ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। [কানযুল উম্মাল]
১০.হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের সৌভাগ্যের দলীল হল, তার প্রথম সন্তান কন্যা হওয়া। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ মহিলা স্বামীর জন্য বেশি বরকতপূর্ণ যার (বিবাহের) মোহর অতি কম এবং প্রথম সন্তান কন্যা। [দুররে মনসূর]
১১.হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মহিলা রাতে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করে এবং স্বীয় স্বামীকে জাগিয়ে দেয়, যাতে সেও নামায আদায় করতে পারে, সে যদি না জাগে তাহলে জাগানোর জন্য মুখের উপর পানির ছিটা মারে। এ ধরনের মহিলার উপর আল্লাহর রহমত। [আবুদাউদ]
১২.হযরত হুসাইন ইবনে মিহসান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার তার ফুফু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাজির হলে নবীজি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। তখন নবীজি জানতে চাইলেন, তুমি তার সাথে কিরূপ আচার ব্যবহার কর? তিনি বললেন, সাধ্যমত সকল পন্থায় তার সেবা করি এবং আমার সাধ্যমত তার সাথে ভালো আচরণ করি। এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মনে রেখো, সেই তোমার বেহেশত দোযখ। [তারগীব]
১৩.হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন নারী অপব্যয় না করে স্বীয় স্বামীর ঘর থেকে কোন পানাহারের বস্তু (দান) খরচ করল, এতে স্বামীরও সওয়াব হবে। উভয়ের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা। [বুখারী]
লিখেছেনঃ প্রিন্সিপালঃ-শাহজালাল রহ, ৩৬০ আউলিয়া লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা উপশহর সিলেট।