বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়ে
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ সোমবার বিকেল ০৫:৪৮, ২২ নভেম্বর, ২০২১
বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান লিজা। সোমবার (২২নভেম্বর) ভোর ৬টায় পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান লিজা ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, এমন সময় খবর আসে লিজার বাবা আলাল উদ্দিন (৪০) প্রবাসে মারা গেছেন। আকস্মিক বাবার মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও শিক্ষক ও স্বজনদের কথায় সোমবার কেন্দ্রে গিয়ে জীব বিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লিজা।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের সহনাটি দক্ষিণ পাড়া গ্রামে। চলতি বছর সে স্থানীয় গিধাউষা হাসন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে লিজার বাবা আলাল উদ্দিন দুই বছর ধরে সৌদি আরবের রিয়াদে থাকতেন। সেখানে তিনি একটি বাগানে কাজ করতেন। রোববার দুপুরে (সৌদি আরব সময়) আলাল উদ্দিন শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে তাকে রিয়াদেও একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় (সৌদি আরব সময়) তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে বেশ কয়েক বছর তিনি মালয়েশিয়ায়ও ছিল।
প্রয়াত আলাল উদ্দিনের বড় ভাই হাবিবুর রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমার ভাই ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। রোববার অসুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আমরা প্রবাসে থাকা স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করছি।
এদিকে সৌদি আরব থেকে রোববার রাতে আলাল উদ্দিনের মৃত্যুর খবর বাড়িতে আসলেও পরীক্ষার কথা ভেবে লিজার পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখে স্বজনরা। কিন্তু পরের দিন সোমবার ভোরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাড়িতে শোকের মাতম শুরু হয়।
লিজার পরীক্ষা কেন্দ্র পাশ্ববর্তী উপজেলা কেন্দুয়ার বেখৈরহাটি নরেন্দ্র কান্ত (এন.কে) উচ্চ বিদ্যালয়ে। সোমবার সকালে বাবা হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যায় লিজা। সহপাঠী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় জীব বিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
গিধাউষা হাসন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুজ্জামান ফকির বলেন, লিজা আমার বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ফার্স্ট গার্ল। তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। সে যেন ভালভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি।