পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত সিলেটের মেয়র
মোঃইবাদুর রহমান জাকির বুধবার সন্ধ্যা ০৭:০৩, ১০ আগস্ট, ২০২২
মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাচ্ছেন চার সিটি করপোরেশনের মেয়র। এর মধ্যে মন্ত্রীর পদপর্যাদা পাচ্ছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র। আর চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক আল মামুন মোর্শেদের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।
এ বিষয়ে মেয়রদের নামের পাশে মন্ত্রীর পদমর্যাদা উল্লেখ করে গেজেট প্রকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
এদিকে, অন্যান্য সিটির মেয়ররা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও সিলেট সিটিতে টানা দুইবার নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবারও বঞ্চিত রয়ে গেলেন।
২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আরিফুল হক চৌধুরী সিসিক মেয়র নির্বাচিত হবার পর ১০ মাসের মাথায় রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং ঢাকা উত্তর সিটি উপনির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে দেয়া হয় পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা। ওই সময়ও সিসিক মেয়রকে এমন কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই একযোগে অনুষ্ঠিত হয় সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। তিনটির মধ্যে সিলেট ছাড়া বাকি দুটিতে বিজয়ী হন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী। আর সিলেটে জয় পান বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
একই সাথে নির্বাচিত হওয়া তিন সিটির মধ্যে সিলেটের আরিফ ছাড়া বাকি দু’জনকে ১০ মাস পর দেওয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। কিন্তু বঞ্চিত থাকেন সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী। নতুন করে ফের চার সিটি মেয়রকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা বন্টন করা হলেও এবারও বঞ্চিত থেকে গেলেন সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী।
বিষয়টি নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন মহলে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন-সম্প্রতি সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মেয়র আরিফের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন-‘সিলেটের মেয়র তো ভালো। ও তো ভালো কাজ করছে।’
সরকার প্রধানের এমন বক্তব্যের পরও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা না দেওয়ায় সিলেটের সচেতন মহলের অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে এর আগে সিলেটের (সাবেক) মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চারদলীয় জোট সরকার আমলে। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছিলেন কামরান।
তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ‘পরিবর্তন’ আওয়াজ তুলে আরিফুল হক চৌধুরী ৩৫ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে কামারানকে হারিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৫ হাজার ১০০টি।
চতুর্থ সিটি নির্বাচনেও কামরানকে হারিয়ে বিজয়ী হন আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। তবে দুটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল স্থগিত হওয়া ১১ আগস্ট ওই দুই কেন্দ্রে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আরিফুল হক মোট ভোট পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৩টি। অন্যদিকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৮৬ হাজার ৩৯৭টি।