ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার রাত ০৩:০৬, ২৩ আগস্ট, ২০২২
প্রাথমিক পর্যায়ে ফজরের নামাজের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। প্রথম দফায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করবে। এ জন্য ১০ সেট (প্রতি সেটে ৬টি বগি) ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপর একটি ট্রেন চলাচল করার কথা। তবে শুরুতে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন চালানো হবে। ঢাকার যাত্রীরা কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এবং যাত্রী বেড়ে গেলে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের বিরতি কমিয়ে আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমটিসিএলের এমডি মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি এবং পরিচালনার নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগামী বছর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’ পর্ব শেষ পর্যায়ে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শুরু হবে। এ পর্যায়ে মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক, সংকেত ব্যবস্থাসহ সব ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। এরপর অক্টোবর থেকে সিমুলেটরের মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। শেষ ধাপে যাত্রীবিহীন ট্রেন চলাচল করবে। যাত্রী নিয়ে যে গতিতে এবং যেভাবে চলার কথা, ঠিক সেভাবেই ১৫ দিন যাত্রীবিহীন চলাচল করবে। ডিসেম্বরে যাত্রীসহ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে।
তবে এমডি মেট্রোরেল চালুর কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি। আলোচনা আছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে পারে।
মেট্রোরেলের ভাড়া এখনো ঠিক হয়নি, কীভাবে পরিচালনা করা হবে, জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ভাড়া নির্ধারণে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি কাজ করছে। শিগগিরই ভাড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তবে এর আগে র্যাপিড পাস বা স্থায়ী কার্ড এবং তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার পুরো ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। সরকার ভাড়া ঠিক করে দিলে সফটওয়্যারে ভাড়ার হার বসিয়ে র্যাপিড পাস বিক্রি করা শুরু হবে।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরো পথে ওপরের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশন থেকে নামার সিঁড়ির পর জায়গা থাকছে না। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে। সে কাজও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। চালুর আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, এর মধ্যে ১৭-১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পোস্টারে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে পোস্টার লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন বলেছে, তারা এটি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। এ ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনায় আলাদা পুলিশ বাহিনী গঠনের প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে।
২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের দিকে। গত জুলাই পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
প্রথম দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এ জন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ডিএমটিসিএল। অনুমোদন পেলে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। সর্বশেষ যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে জাইকা দেবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সরকার খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। শুরুতে জাইকার দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা।