শোকার্ত মানুষের চোখের জলে নিহত শহীদ ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের দাফন সম্পন্ন
কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা রবিবার রাত ০১:১৪, ৭ আগস্ট, ২০২২
ভোলায় পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. নুরে আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় তার নিজ বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রাত ১০ টার দিকে মধ্য চরনোয়াবাদ এলাকায় আলতাজের রহমান ডিগ্রী কলেজ মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নুরে আলমের জানাজায় কয়েক হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
এদিকে নুরে আলম এর লাশ ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় আসলে হাজারো নেতা-কর্মী তাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে অবস্থান নেয়। ভেদুরিয়া ফেরীঘাট এলাকা থেকে শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর দিয়ে লাশবাহী এম্বুলেন্স ভোলায় আনা হয়। এ সময় রাস্তার দু’পাশে শোকার্ত মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
নিহত শহীদ নুরে আলমের লাশবাহী এম্বুলেন্স ইলিশা বাস স্ট্যান্ড, নতুন বাজার, বাংলাস্কুল মোড় হয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সামনে গিয়ে থামে। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ ঘটে। এখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তার লাশ নেয়া হয় নিজ বাড়ীতে। সেখানেও স্বজনদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাশ ভাড়ী হয়ে উঠে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা,পাড়া-প্রতিবেশরা।
বাড়ী থেকে তার লাশ আনা হয় আলতাজের রহমান ডিগ্রী কলেজ মাঠে জানাজা নামাজের জন্য। কলেজ মাঠে আগ থেকে অবস্থান নেয় বিএনপি ও তার সকল অঙ্গ-সংগঠন এবং বিভিন্ন দল ও মতের হাজার হাজার মানুষ।
জানাজা পূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন বির বিক্রম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন, ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর, সাধারন সম্পাদক হারুন আর রসিদ ট্রুম্যান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল, নিহতের বড় ভাই আবুল কালাম প্রমূখ।
এসময় কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, নুরে আলম দলীয় কোনো প্রোগ্রামে নিহত হয়নি। সাধারণ মানুষের জীবনে সুখ শান্তি আনতে সে নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। একদিন এ হত্যার বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, কেন এই মৃত্যু ? কেবলমাত্র নিজেদের অবৈধ শাষণকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই এ তরুণ ছাত্র নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
জানাজায় অংশগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, অন্যায়ভাবে, অযাচিতভাবে গুলি করে আমার সহযোদ্ধাকে হত্যা করায় আজ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। কারণ আমরা শোকাহত। কিন্তু একদিন আমরা এ শোককে শক্তিতে রূপান্তর করব ইনশাআল্লাহ। আজকে নুরে আলমের জানাজায় একটি শপথ করতে চাই, যারা আমার প্রাণপ্রিয় সহযোদ্ধাকে হত্যা করেছে যদি বেঁচে থাকি-বাংলার মাটিতে এ হত্যার বিচার করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
উল্লেখ্য-গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমসহ অনেকে। প্রথমে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে ঢাকার গ্রীন রোডে কমফোর্ট নামের বেসরকারি একটি হাসপাতালে তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে বুধবার বিকালে সোয়া ৩টার দিকে মারা যান।
তার বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সকলের ছোট ছিলেন নুরে আলম। তার স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানাজায় এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হায়দার আলী লেলিন, সাবেক ছাত্রনেতা মোক্তার হোসেনসহ ভোলা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জানাজার নামাজ পড়ান চরনোয়াবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেন।