ঢাকা (দুপুর ১:৪৮) শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News সিলেটে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম Meghna News দাউদকান্দিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন Meghna News কোটা আন্দোলন : সিলেট বিভাগে ২৮টি মামলা, ২০ হাজার মানুষ আসামী Meghna News ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক গৌরীপুরে ছুরিকাঘাত Meghna News টাঙ্গাইলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের হামলা Meghna News ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন Meghna News সারা দেশে আজ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি Meghna News যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে সংঘর্ষ, হাসপাতালে নেয়ার পথে যুবকের মৃত্যু Meghna News ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ Meghna News ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধগুলো এখনো সংস্কার হয়নি, দুর্ভোগে উপকূলবাসী

ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য – দুধরচকী

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।



মায়ের ভাষার কথা বলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মাতৃভাষা মহান আল্লাহর অপার দান।এ ভাষা দিয়ে মানুষ নিজের মনের ভাষা প্রকাশ করে। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
মহান আল্লাহ সব নবী-রাসূলকে স্ব-জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন। যাতে তারা স্বীয় জাতিকে দ্বীনের দাওয়াত স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, আমি রাসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দ্বীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন। -সূরা ইবরাহিম: ৪
কোরআনে মাজিদের এ আয়াত থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রতিভাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বীনের পথে দাওয়াত দানকারীদের জন্য মাতৃভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের নির্দেশনাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার রবের পথে দাওয়াত দিন কৌশল ও উত্তম ভাষণের মাধ্যমে। ’ –সূরা নাহল: ১২৫
কোরআনের এসব বর্ণনা দ্বারা এ কথা বুঝতে বাকী থাকে না যে, স্বজাতিকে উত্তম ভাষণের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ মাতৃভাষার ওপর পারদর্শিতা অর্জন অনিবার্য।
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচে’ বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী। ’ রাসূলের এ বাণী থেকে প্রমানিত হয়; বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা রাসূল (সা.)-এর আদর্শ।
আল্লাহদ্রোহী সম্রাট ফেরআউনকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে হজরত মুসা (আ.) নিজ ভাই হজরত হারুন (আ.) কে সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। কারণ হজরত হারুন (আ.) খুব সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে ও বুঝাতে পারতেন। এ প্রসেঙ্গে কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘(হে প্রভূ) আমার ভ্রাতা হারুন আমার ছেয়ে সুন্দর ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে। সুতরাং তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন। ’ –সূরা ক্বাসাস: ৩৪
তথাপি মহান আল্লাহর নিদর্শন হিসেবেও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়া ঈমানি কর্তব্য। কোরআন মজিদের বর্ণনা অনুযায়ী ভাষা বৈচিত্র মহান আল্লাহর অনুপম নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। ’ –সূরা রুম: ২২
বর্ণিত এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাও মহান আল্লাহ পাকের নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। তাই এ ভাষার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনসহ যত্নশীল হওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়ার নির্দেশনায় শামিল।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি আমাদের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মরিয়া হয়ে উঠেছিল উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে। তাদের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাভাষাভাষীরা গড়ে তুলেন তীব্র আন্দোলন। কিন্তু বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন রাজপথ। এই দূর্বার আন্দোলনে শামিল হয়ে মায়ের ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেন এদেশের বহু ছাত্র-জনতা।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংগ্রামরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বরকত, সালাম, জব্বার, শফিক ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেক বীর সন্তানেরা। এভাবে মাতৃভাষার জন্য রক্তদান বা শাহাদত বরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার দীপ্ত শপথে উৎসর্গকৃত তাজা রক্তের বদৌলতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ করে এবং রক্তে রঞ্জিত ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় ভূষিত হয়। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা সৃষ্টিতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনই প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। ভাষা আন্দোলনের এই গৌরবোজ্জ্বল রক্তিম ইতিহাস জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগ থেকে যুগান্তরে এটি আমাদের প্রত্যাশা।
কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য, যে লক্ষ্য, চেতনা ও আবেগ নিয়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল আন্দোলনের এতো বছর পরও এই সময়ের সে চেতনার প্রতিফলন তথা মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠাত লাভ করেনি। যে আবেগ ও প্রেরণা নিয়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার প্রতি নবপ্রজন্মের সেই ভালোবাসা নেই বলে মনে হচ্ছে। হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে শিশুরা হিন্দি কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। উচ্চবিত্তরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এটিকে অনেকে এক ধরণের আভিজাত্য বলে মনে করছেন।
বাংলা ভাষার প্রতি এ রকম উদাসীনতা মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা ও ভাষা শহীদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করার শামিল নয় কি? এ জন্য কি ভিনদেশী ভাষা ও বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা চালুকারী অতি প্রগতিবাদীরা দায়ী নয়?
তাই আসুন! ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই মাসে শপথ নিই, মায়ের ভাষাকে ভিনদেশী আগ্রাসনমুক্ত করার। পরিহার করি ভিনদেশী ভাষাকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা। রুখে দাঁড়াই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। মাতৃভাষার বিশুদ্ধ চর্চা ও প্রয়োগে সচেষ্ট হই এবং বিশাল এ নিয়ামতের জন্য মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি। সেই সঙ্গে যারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শাহাদতবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করি।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।
শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT