আওয়ামী লীগ বিএনপি’র প্রার্থী শিক্ষায়,স্বতন্ত্র প্রার্থী অর্থে এগিয়ে
ইবাদুর রহমান জাকির,সিলেট মঙ্গলবার রাত ১০:২৭, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০
প্রথম ধাপে মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বীতা করছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, বিএনপির আনোয়ারুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইদুল ইসলাম।
তিন প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী এইচএসসি পাস। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তার কোনো দায়-দেনা নেই। বিএনপির প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বিএ পাস। তিনি পেশায় সাংবাদিক। তারও কোনো দায়-দেনা নেই। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইদুল ইসলামের শিক্ষার দৌড় অষ্টম শ্রেণী। তবে পেশায় ব্যবসীয় এ প্রার্থীর সম্পদ অন্য দুজনের থেকে এগিয়ে। অবশ্য তার দায়-দেনাও বেশি।
আ. লীগের প্রার্থী কামরান চৌধুরীঃ
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে অংশ নিয়েছেন আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী। তার জন্ম ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। কেসি করাত কল নামে মহবন্দ এলাকায় তার একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তিনি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জহির উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও আছিয়া খানম চৌধুরীর ছেলে।
হফলনামার তথ্য অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৬ টাকা। আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে- কৃষি খাতে ২ হাজার, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ও সম্মানী ভাতা থেকে মেয়র হিসেবে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫১৬ টাকা। তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা ছিল। এরমধ্যে বেকসুর খালাস পেয়েছেন ৫টিতে। আর ২টিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নগদ টাকা রয়েছে ২০ হাজার। স্ত্রীর কাছে ১২ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকরা অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ৮০ হাজার টাকা। নিজের নামে স্বর্ণালঙ্কার নেই। বিবাহের উপহার হিসেবে স্ত্রীর কাছে ১০ তোলা স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিজের নামে ২৫ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র ২৫ হাজার টাকার। স্ত্রীর মোবাইল, ফ্রিজ ইত্যাদিতে ৩০ হাজার টাকার সামগ্রী আছে। স্থাবর সম্পদে উত্তরাধিকারসূত্রে কৃষি জমি ৭০ শতক, অকৃষি ২৮ শতক ও বাড়ি/এপার্টমেন্টে যৌথ মালিকানায় ৬৯ শতক। যার ৪ ভাগের ১ ভাগের মালিক তিনি।
বিএনপি প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলামঃ
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ১ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (এলএলবি) ডিগ্রিধারী। তিনি পেশায় সাংবাদিক। কাজ করেন নিউজ টুডেতে। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০০ টাকা। তিনি পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গাজিটেকা গ্রামের আজিম উদ্দিন ও জয়নব বিবির ছেলে। তার বিরুদ্ধে মামলা ৪টি। একটিতে বেখসুর খালাস পেয়েছেন। দুটি চলমান আর একটি বিচারাধীন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নগদ টাকা রয়েছে ১৭ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ ১০ হাজার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকরা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১৮ হাজার টাকা। নিজের নামে ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার দেখিয়েছেন। বিবাহের উপহার হিসেবে স্ত্রীর কাছে ৫ তোলা স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিজের নামে ৫০ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদ এর মধ্যে নিজের নামে আছে ৯ দশকিম ৫০ শতক কৃষি জমি। যৌথ মালিকানায় কৃষি জমি আছে ৫ একর। এতে ৫ ভাগের ১ অংশের মালিক তিনি। তার বাড়িতে যৌথ মালিকানায় আছে ৪০ শতক। এতে ৬ ভাগের ১ অংশের মালিক তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলামঃ
তিনি এবারই প্রথম মেয়র নির্বাচনে লড়ছেন। তার জন্ম ১৯৮০ সালের ৮ জুন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তার শিক্ষাগত যোগত্যা অষ্টম শ্রেণী। মাসুদা এন্টারপ্রাইজ নামে পৌর শহরের শাহজালাল শপিং সিটিতে রয়েছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আইলাপুর গ্রামের মো. আব্দুল খালিক ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। তার বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা। আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে- বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ১ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাতে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হলফনামায় দেখিয়েছেন। তবে আয়ের খাত সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার কথা থাকলেও তিনি হলফনামায় তা উল্লেখ করেননি। তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আছে। এরমধ্যে বন্যপ্রাণী আইনে মামলাগুলো চলমান। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নগদ রয়েছে ৩৬ হাজার ৮৯০ টাকা। স্ত্রীর কাছে ছিল ১০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল ২ লাখ। স্ত্রীর কাছে ৫০ হাজার। নিজের নামে যানবাহন রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার। নিজের নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য অলঙ্কার সামগ্রী ৩৫ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিজের নামে ২৫ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র ২৫ হাজার টাকার। অন্যান্য খাতে তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে কৃষি জমি ১ দশকি ৩০ একর, অকৃষি জমি ২৪ শতক, নিজের নামে বাড়ি/এপার্টমেন্ট ১৩১৫ সেফটি ফ্ল্যাট। ২টি প্রতিষ্ঠানে তার দেনা ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ ডিসেম্বর বড়লেখা পৌরসভায় ইভিএমের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ হবে। এতে ৩ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর ২৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১১ জন প্রতিদ্বীতা করছেন। ১১ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। পৌরসভার নয় ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৫ হাজার ৪৪৩ জন।