জাতীয় পরিচয় পত্র এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
এইচ এম দিদার রবিবার রাত ০১:২৫, ৬ জুন, ২০২১
১। পৃথিবীর সকল দেশেই “জাতীয় পরিচয় পত্র”— সরকারের তথা আইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক প্রস্তুত এবং সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। এবং “ভোটার আইডি কার্ড/ভোটার লিস্ট”— “নির্বাচন কমিশন” কর্তৃক প্রস্তুত এবং সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত।
২।“নির্বাচন কমিশনকে” অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। সময়ের প্রয়োজনে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশে “জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড ” তৈরী করার জন্য।
৩।একটি “জাতীয় পরিচয়পত্র” হল, একজন ব্যক্তির সকল তথ্য সম্বলিত পরিচয় বহনযোগ্য “ডকুমেন্ট”,সাধারণত ডিজিটালি-এমবেড করা একটি কার্ড, যেখান ব্যক্তির একটি “ফটো”, “আঙুলের মুদ্রণ” এবং কিছু ক্ষেত্রে “আইরিস স্বীকৃতি সিস্টেমের” মাধ্যমে কারো পরিচয় নিশ্চিত করার উপায় হিসাবে বহন করার জন্য, একটি পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহারযোগ্য, এবং যা একটি সরকারী কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা হয়।
৪। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন বিদ্যমান। সকল বাংলাদেশী যারা ১৮ বছর বয়স বা তার চেয়ে বেশির বয়সী, তারা সকলে কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডারের সাথে সংযুক্ত, যা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন “ইভিএম” এ ব্যবহার করছে।২০১৬ সালের পুর্বে সাধারণ আইডেনটিটি কার্ড সরবরাহ করা হত যেখানে শুধুমাত্র আইডিধারী ব্যক্তির নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, আইডি নাম্বার, ছবি ও স্বাক্ষর উল্লেখ ছিল।
৫। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র উপস্থাপন করে। স্মার্ট কার্ডে একটি ইন্টারগ্রেট সার্কিট কার্ড (আইসিসি) সংযুক্ত আছে যা চিপ কার্ড নামেও পরিচিত। স্মার্টকার্ডে এ চিপ কার্ড মেশিনের সাহায্যে রিড করা যাবে। সেখানে নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে।জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড”, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য প্রয়োজন, যেমনটি নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ ক্ষেত্রেও।
৬। কোনও দেশের যদি, আর্থিক উপায় এবং প্রযুক্তিগত সুরক্ষা থাকে, তাহলে “জাতীয় পরিচয়পএ/ ভোটার কার্ড একটাই হয়ে থাকে। অনেক দেশে আবার আলাদা রয়েছে। দুইটি কার্ডের ব্যবহারের ভিন্নতার কারনে— “জাতীয় পরিচয় পত্র”— সরকারের তথা আইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক প্রস্তুত এবং সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। এবং “ভোটার আইডি কার্ড/ভোটার লিস্ট”— “নির্বাচন কমিশনের” কর্তৃক প্রস্তুত এবং সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত।
৭।“ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে” তথ্য আদান-প্রদানের জন্য, “জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শুধু “নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ করা হয় না।
৮।বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমান/ভবিষৎে “জাতীয় পরিচয়পত্র” থেকে প্রাপ্ত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমূহ:-
১। জাতীয় পরিচয়পএ।
২। দেশে এবং বিদেশে যে কোন সরকারি/বেসরকারি চাকুরির জন্য।
৩। আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পাওয়া,
৪। শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলা,
৫। ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন,
৬। ট্রেড লাইসেন্স করা,
৭। পাসপোর্ট করা ও নবায়ন/ই-পাসপোর্ট।
৮। যানবাহন নিবন্ধন।
৯। চাকরির আবেদন,
১০। বীমা প্রকল্প
১১। স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়,
১২। বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন,
১৩। ব্যাংক হিসাব খোলা,
১৪। নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ।
১৫। ব্যাংকঋণ,
১৬। গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংযোগ,
১৭। সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন,
১৮। টেলিফোন ও মোবাইলের সংযোগ,
১৯। সরকারি ভর্তুকি,
২০। সাহায্য ও সহায়তা,
২১। ই-টিকেটিং,
২২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি,
২৩। আসামি ও অপরাধী শনাক্তকরণ,
২৪। বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর পাওয়া ও সিকিউরড ওয়েব লগে ইন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে।
২৫। বিভিন্ন দেশের ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে।
২৬। স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার জন্য/ হেলথ কার্ড।
২৭। বিশ্বের যেকোন দেশে আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য।
২৮। বাংলাদেশে, সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক আওতায় সরকার থেকে সকল অনুদানের গ্রহনের জন্য প্রয়োজন।
৯। সনাক্তকারী কাগজপত্র/পরিচয়পত্র”, প্রাচীনতম পরিচয় দলিল হিসাবে বিবেচিত পাসপোর্টের একটি সংস্করণ “ইংল্যান্ডের পঞ্চম কিং হেনরি”,—-“নিরাপদ আচরণ আইন-১৪১৪” দিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন।
১০। নেদারল্যান্ডস ১৮৪৯ সালে, তাদের নিজস্ব “পার্সোনাল নাম্বার(পিএন)” সিস্টেম শুরু করেছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন করে ১৯৪০ সালে। তখন প্রতিটি নাগরিককে ব্যক্তিগত আইডি কার্ড প্রদান শুরু করেছিল।
এই সময়ের মধ্যে ১৯৩৬ সালে, আমেরিকা তাদের “সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার কার্ড বিতরণ শুরু করে।
১১। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো বাস্তবতা মেনে নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য।
সূত্র:-
১। https://www.theguardian.com/travel/2006/nov/17/travelnews
২। https://www.trulioo.com/blog/infographic-the-history-of-id-verification
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_national_identity_card_policies_by_country
লেখক: মেজর (অব.)মোহাম্মদ আলী (অব.)
চেয়ারম্যান, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ।