বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে
মোবারক হোসাইন সোমবার বিকেল ০৫:১৬, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০
১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনা বিধুর। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিলো গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পাকিস্তানীরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ)’র নেতারা।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিশুকল্যান মিলনায়তনে বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ)’র উদ্যোগে “১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় নির্মম নৃশংস গণহত্যায় নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে” এক স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
বিএসএএফ আয়োজিত স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঠিক বিজয়ের প্রাক্কালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৫ মার্চের কালরাতেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিয়েছেন। আজকের এই দিনে বাঙালি জাতি তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী’র সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ অধ্যাপক ড. প্রফেসার নিম চন্দ্র ভৌমিক। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ জাসদ’র সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান। উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী যুব লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ সভাপতি এম এ জলিল, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কার্যনির্বাহী সদস্য মানিক লাল ঘোষ, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ফজলে রব্বী মোহাম্মদ ফরহাদ, আমাদের নতুন সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার সমীরন রায়, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু, মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন ফারুকী ও মুখপাত্র ওলামা লীগ ক্বারী মাওলানা আসাদুজ্জামান, লোকশক্তি পার্টির সভাপতি শাহিকুল আলম টিটু, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল- পিডিপি’র উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাকসুদ আলম চৌধুরী।
আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে হারানো বুদ্ধিজীবীরা নিবিড় বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানীদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন বলেই আজ আমরা পেয়েছি লাল সবুজ পতাকার অসম্প্রদায়িক, স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র এবং জাতিসত্তার নিজস্ব পরিচিতি।
তারা বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। দেশের এই মেধাবী মানুষদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা ও দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল এমন এক বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠা, যা হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষাদীক্ষা ও বিত্ত-সম্পদের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুনীতি ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মুক্ত ধর্ম বর্ণের সম্প্রীতির কল্যাণময় সোনার দেশ। সে দেশটিতে সবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করা হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ম-বর্ণ শ্রেণী-ভাষা নির্বিশেষে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার কায়েমের মধ্য দিয়ে মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন। তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দলাল চক্রের অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। জাতীয় নেতৃত্বকে কালক্ষেপন না করে বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে এখনি এগিয়ে যেতে হবে।
বক্তারা বলেন, উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের সোনার বাংলায় বারবার আঘাত হেনেছে। বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আঘাত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙতেও তারা দ্বিধা বোধ করেনি। কল্যাণময় ও শান্তিপূর্ণ সমাজে সবার মর্যাদা, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত রাষ্ট্রই ছিল বুদ্ধিজীবীদের আকাঙ্খা। বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখতে বতমান সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমাদের সকলকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় ঐকবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব হবে।