ঢাকা (রাত ২:৫৫) শুক্রবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৃদ্ধ কাঠুরের দায়িত্ব নেয়নি কেউ

এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ Clock বুধবার বিকেল ০৪:৩৭, ৫ মে, ২০২১

সময়টা খুব একটা কম নয়। ৩০ বছর। নিজ জন্মস্থান গাইবান্ধা থেকে ২৫ বছর বয়সে এসে বসতি গড়েন আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কোন কাজ না থাকায় শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। পরে দীর্ঘদিন ভিক্ষা করার পর এক ব্যক্তির সহায়তায় পান একটি কুড়াল। শুরু হয় অন্য রকম এক জীবন। এই কুড়াল দিয়েই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে কাঠ কাটা (ফাড়া) শুরু করেন। এতে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। আর ঠিকানা জটিলতার কারণে পান না সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা। আর তাই ২৮ বছর ধরে কুড়াল হাতে সংগ্রাম করা বৃদ্ধ হাঁটাচলা করেন কোনোমতে।

বলছিলাম ৭৫ বছর বয়সী মশিরউদ্দিরের কথা। জন্ম গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতে হলেও নদীভাঙনের কবলে পড়ে ৩০ বছর আগে চলে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ওই সময় স্থায়ী বাসস্থান না থাকায় কয়েক বছর রেলের বস্তিতে বসবাস করার পর প্রায় ১৫ বছর ধরে বাস করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগরে ভাড়া বাসায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র না হওয়ায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করেও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি মশিরউদ্দি ও তার পরিবার।

জানা যায, গাইবান্ধা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার পর তিন মাস অন্যের গরুর পালের রাখাল হিসেবে কাজ করেন। পরে কোনো কাজ না পেয়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেন। পরে ভিক্ষা বাদ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য স্থানীয় এক ব্যবসায়ী আমজাদ আলীর শরণাপন্ন হন। তিনি মশিরউদ্দির হাতে তুলে দেন একটি কুড়াল।

কুড়ালটি পাবার পর জেলা শহরের ফিটু ও দুরুলের খড়ির আড়তে এক বছর কাজ করেন মশিউদ্দির। তারপর নিজেই শুরু করেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে খড়ি ফাঁড়ার কাজ। যা তিনি এই ৭৫ বছর বয়সেও অব্যাহত রেখেছেন। এতে এখন দৈনিক ৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পান। ৩ ছেলের মধ্যে এক প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলছে মশিরউদ্দির সংসার। আলীনগর এলাকার রবিউল ইসলাম মতির বাড়িতে মাসিক ১৫০০ টাকায় ভাড়া থাকে মশিরউদ্দিরের পরিবার।

মশিরউদ্দির বলেন, কোনো কাজ না পেয়ে একসময় ভিক্ষা করেছি। কিন্তু ভিক্ষা করেও সে সময় তেমন চলতে পারতাম না। তাই এলাকার এক ব্যবসায়ীর সহযোগিতা ও পরামর্শে কুড়াল নিয়ে খড়ি ফাঁড়ার কাজ শুরু করি। বয়স অনেক হয়েছে, শরীরে আর কুলায় না। কিন্তু কী আর করার। আমি না খাটলে আমার বৌরে আর প্রতিবন্ধি ছেলেটারে কে খেতে দেবে ? সংসার চালাতে এই কষ্ট করতেই হচ্ছে।

মশিরউদ্দির এক প্রতিবেশী হাজেরা বলেন, অনেক বছর ধরেই তাদের এখানে বাস করতে দেখছি। এক প্রকার খেয়ে না-খেয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছে পরিবারটি। মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও একটু সহযোগিতা করেন না।

ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত লজ্জার এ কারণে যে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ কুড়াল হাতে নিয়ে প্রতিদিন কাজ করছেন। এখনই সময় তার প্রতি সদয় হবার।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এনামুল হক দায়সারাভাবে বলেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার যেকোনো একটা ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টা করবো।

তবে জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, এমন একজন ব্যক্তির এই বয়সে কুড়াল হাতে কাজ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে বৃদ্ধ মশিরউদ্দিকে যেকোনো সরকারি সহায়তা নিতে হলে গাইবান্ধা থেকেই নিতে হবে। কারণ সেখানকার ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

আর তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা ও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়া একটি কুড়ালেই ভর করে ২৮ বছর ধরে সংসার পরিচালনাকারী মশিরউদ্দিরের দায়িত্ব নিতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান এলাকাবাসী।

 

 




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT