ঢাকা (বিকাল ৩:০০) শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

হাকালুকি ও পাথারিয়ায় ইকো ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা

<script>” title=”<script>


<script>

মোঃ জাকির হোসেন, জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজারঃ
এশিয়ার সর্ববৃহৎ উদ্যান ও জলাভুমি হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, ইকোপার্ক, পাথারিয়া পাহাড় আর সবুজ চা বাগান ঘিরে বড়লেখায় ইকোট্যুরিজম এলাকা গড়ে তোলার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন বিকাশে প্রয়োজন শুধু মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন। এতে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক স্পটগুলোই হতে পারে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার এবং সরকারের পর্যটন খাতের আয়ের অন্যতম উৎস।
প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে সাজিয়েছে মৌলভীবাজার জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা উপজেলাকে। তাইতো এখানকার প্রকৃতি যেকোনো মানুষকে সহজেই কাছে টানতে পারে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও অবসর পেলেই ছুটতে চান এসব এলাকায়। যান্ত্রিক জীবনে প্রকৃতির পরশ মাখতে সব বয়সী নারী-পুরুষই চায় প্রকৃতির সান্নিধ্য। পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য এখানে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান থাকলেও এগুলোর বিকাশে নেই যুগোপযোগী কোন উদ্যোগ। অথচ দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করলে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে প্রতি দেশি-বিদেশী পর্যটকরা আরো বেশি আকৃষ্ট হতো। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো এ জনপদ। এতে স্থানীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাথে সরকারের পর্যটন খাতে বাড়তো আয়ও। বড়লেখার প্রধান আকর্ষণ দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোপার্ক। এছাড়াও প্রাকৃতিক ঝর্ণা ঝেরঝেরি-ফুলবাগিচা, এশিয়ার সর্ব বৃহত্তম জলাভুমি হাকালুকি হাওর, পাথারিয়া পাহাড়, পাহাড়-সমতলে সারি সারি চা বাগান, আদিবাসি খাসিয়া পল্ল­ী ও হাওরপারের হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের চোঁখ জোড়ানো পাখিবাড়ি।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কঃ মাধবকু- জলপ্রপাতে যাওয়ার উত্তম সময় বর্ষা, শরৎ ও শীতকাল। বর্ষা ও শরতে ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে। পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২শ’ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এই স্বর্গীয় আমেজের খুঁজেই দেশি-বিদেশী পর্যটক ছুটে আসেন মাধবকু- জলপ্রপাতে। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অঝরধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটির পরিচিতি প্রকাশ পায়। বড়লেখা উপজেলার ৮নং দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঁঠালতলী) ইউনিয়নের গৌরনগর মৌজায় মাধবকু- জলপ্রপাতের অবস্থান। প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মাধবকু- জলপ্রপাত, সুবিশাল পর্বত গিরি, শ্যামল সবুজ বনরাজি বেষ্টিত ইকোপার্ক, পাহাড়ী ঝরনার প্রবাহিত জলরাশির কলকল শব্দ সবমিলিয়ে মাধবকু- বেড়াতে গেলে পাওয়া যায় এক স্বর্গীয় আমেজ। জলপ্রপাতের পাশ ঘেষে যাওয়া খালটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম পাখি, মৎস্যকন্যা, মাছ প্রভৃতির দৃষ্টিনন্দন সব মূর্তি। অভ্যন্তরীণ ৮ কিলোমিটার রাস্তার উভয় পাশে বনবিভাগের লাগানো নানা প্রজাতির গাছ গাছালি সৌন্দর্য্যরে মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাধককুণ্ড জলপ্রপাত, ইকোপার্ক ও পাথারিয়া পাহাড় অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পসরা সাজিয়ে বসলেও তা অবলোকনের সঠিক কোন ব্যবস্থা নেই। ঝর্ণা ছাড়া অন্যান্য সৌন্দর্যের কিছুই দেখার সুযোগ না থাকায় পর্যটকরা নিরুৎসাহী হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে মাধকু-ের জেলা পরিষদের পার্কিংস্থল থেকে বর্তমান ওয়াচ টাওয়ার হয়ে জলপ্রপাত ঘেঁষে পাহাড় হয়ে খাসিয়া পল্লী ও চা বাগানের ওপর দিয়ে কেবল কারের ব্যবস্থা করলে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা মাধকু-ের প্রতি আরো বেশি করে আকৃষ্ট হবে। এতে সরকারের আয়ও বাড়বে।
ঝেরঝেরি-ফুলবাগিচাঃ পাথারিয়া পাহাড়ের নির্জন পল্লী ডিমাই পুঞ্জির পাশ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি ছড়ার পথে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে কয়েকটি ছোট ঝর্ণা। ছোট হলেও চোখ কাড়ে। ঘন্টা দেড়েক (প্রায় ৬ কিলোমটিার) পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া দিয়ে হাঁটার পর ওপরে ওঠলে দুটি টিলার ভিতরে দেখা যাবে ঝেরঝেরি ঝর্ণা। দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি ঝেরঝেরির শীতল জলধারায় অনেকটাই কমে যাবে। একটু অদূরে ঝেরঝেরির ঠিক ডান পাশে রয়েছে ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝর্ণা। ছড়ার পথ ধরে ফুলবাগিচায় যাওয়া যাবে না। টিলার ভেতর দিয়ে রাস্তাটি খুবই সরু। ফুলবাগিচায় যেতে হলে প্রায় ৬০-৭০ ফুট উঁচু খাড়া দুটি পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে এগিয়ে গেলে তখনই চোখে পড়বে ফুলবাগিচা জলপ্রপাত। বর্ষাকালে এই ঝর্ণাগুলো যৌবনদীপ্ত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর কয়েকটি শুকিয়ে যায়। এছাড়াও পাথারিয়া পাহাড়ের ফুলছড়ি নামক স্থানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নান্দনিক একটি মাটির ব্রিজ যা স্থানীয়দের ভাষায় মাটির পুল নামে পরিচিত।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিঃ বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তে প্রকৃতির বুকে দুই ধরণের চিত্র ধারণ করে হাকালুকি হাওর। ভরা যৌবনে হাকালুকির স্বচ্ছ জলরাশির শান্তভাব যেনো প্রকৃতির বুকে শীতলপাটি বিছিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন পর্যটকরা। স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটেন অনেকে। হাকালুকির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে বড়লেখার অংশে অবস্থান করতে হয়। মিনি সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুঁটে আসেন পর্যটকরা। ৪-৫’শ টাকায় স্থানীয়রা ছোট ট্রলারে করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান হাকালুকির তীরবর্তী এলাকা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওরের জলরাশির মধ্যে সূর্যের প্রতিচ্ছবি মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়া হাওরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার এবং বন্যপ্রাণী বিভাগের অফিস নজর কাড়বে যে কারও।
হাকালুকি হাওরে পর্যটন বিকাশে বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি উদ্যোগের সুপারিশ করেছেন। এগুলো হচ্ছে- হাওরপারের ইসলামপুর গ্রামের চুতুর্দিকে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে গ্রামকে সুরক্ষিত করা। পর্যটক যাতায়াতে গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান বরুদল নদী খনন করে নৌযান চলাচল নির্বিঘœ করা। সেখানে পর্যটন হোটেল ও বিভিন্ন কটেজ নির্মাণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে দিলে পর্যটকরা সেখান থেকে পুরো হাকালুকি হাওর অবলোকনের সুযোগ পাবে। ইসলামপুর গ্রামে পর্যটক ভিত্তিক স্থাপনা তৈরী হলে একদিকে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং অন্যদিকে হাওরের বিলের মাছ নিধন অনেকাংশে কমে যাবে।
পাখি বাড়িঃ শীত, বর্ষা কিংবা গ্রীষ্ম। বছর জুড়ে পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বাড়িটি। তবে শীত মৌসুমে পাখির সমাগম বৃদ্ধি পায়। প্রায় দুই একর আয়তনের বাড়ির চারদিকে রয়েছে নানা জাতের গাছ। বাড়ির এসব গাছে বসবাস করছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি। পাখিদের কলতান, ওড়াউড়ি আর এখানকার প্রাকৃতি দেখতে প্রতিদিন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন পাখি বাড়িতে। বিশেষ করে ছুটির দিনে মানুষের ভিড় একটু বেশি থাকে। চোঁখজোড়ানো এ পাখি বাড়ির অবস্থান বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরের হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাগোয়া। বাড়িটি এক সময় মনোহর আলী মাস্টারের বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে দেশি-বিদেশি পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হলে বাড়ির প্রকৃত মালিকের নাম চাপা পড়ে এখন বাড়িটি পাখিবাড়ি নামেই পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যটকদের এখানকার পাখি দেখার জন্য প্রয়োজনীয় দুরত্বে বাড়িটি ঘিরে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা যেতে পারে। সেখানে পর্যাপ্ত বায়নো কোলার রাখা হলে সব বয়সী পর্যটক দুর থেকে দেশি-বিদেশী পাখির কলকাকলি, নীড়ে ফেরার মনোরম দৃশ্য, উড়াউড়ি, বাসার ডিম ও ছানা পর্যন্ত দেখে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
সারি সারি চা বাগানঃ বড়লেখায় টিলার পাদদেশ আর সমতলের সারি সারি চা বাগানের সৌন্দর্য সরসরি না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। চায়ের একেকটি টিলায় যেন প্রকৃতি সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। উপজেলার ১৪ চা বাগানের সবুজের সমারোহ চা-পাতা চয়নের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমীদের মন ভরিয়ে দেবে।
আগর বাগান আর আতরের কারখানাঃ দেশে-বিদেশে সুগন্ধি আতরের রাজধানী হিসেবে বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়ন পরিচিত হলেও গত কয়েক বছরে গোটা উপজেলায় আগরের গাছের চাষ ও উৎপাদন ছড়িয়ে পড়েছে। সুজানগর তথা বড়লেখার প্রতিটি ঘরে ঘরে আগরের গাছ লাগানো রয়েছে। এসব আগর বাগান আর আগর থেকে সুগন্ধি আতর উৎপাদনের সহস্রাধিক প্লান্ট পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। এখানকার আগর শিল্পও হতে পারে দেশি-বিদেশী পর্যটক আকৃষ্টের অন্যতম মাধ্যম।
শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT