ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:১০) বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং

বিশেষ অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে প্রতারনায় আলোচিত সাহেদ-সাবরিনার উত্তরসূরী দম্পতির

<script>” title=”<script>


<script>

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে
আলোচিত সাহেদ-সাবরিনার উত্তরসূরী রাকিব-রেহেনা। তারা নিজেদের পরিচয় দেন
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আত্মীয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের
সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ
বিশ্বাসের নাতনী, জেলা মহিলালীগের সভাপতি, একজন আইনজীবী ও চিকিৎসক
হিসেবে। আর এসব রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেই দেহ ব্যবসা, সরকারি চাকরি ও
বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমান অর্থ আদায়, চেক
জালিয়াতি, অন্যের আইডি কার্ড ব্যবহার করে ঋণ নেয়া, মসজিদের অর্থ আত্মসাৎ,
সরকারি পুকুরের মাছ মেরে নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি, প্রতারণা ও
জালিয়াতির সাথে জড়িত এই দম্পতি। অনুসন্ধানে এসব অনিয়মের কথা উঠে এসেছে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার-চাঁদলাই গ্রামের মো.
গোলাম রাব্বানীর ছেলে রাকিব আলী ও তার তৃতীয় স্ত্রী মোসা. রেহেনা খাতুনের
বিরুদ্ধে।

দলীয় কোন পদে না থাকলেও সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম করে এই
দম্পতি। ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডিতে রাকিবের টাইমলাইনেও দেখা গেছে
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রশংসা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করতে। আর
এসব ব্যবহার করেই ফায়দা নেয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। আর তাদের এসব
কর্মকান্ডের বিরোধিতা করলেই মামলা-হামলা ও ক্রসফায়ারের হুশিয়ারী দেয় এ
দম্পতি। এছাড়া, জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেখিয়ে
দমিয়ে রাখে চাঁদলাই গ্রামের শতাধিক পরিবারকে। এমনকি সংবাদটি প্রকাশ হলে
প্রতিবেদককেও দেখে নেয়ার হুমকি দেয় রেহেনা খাতুন।

জানা যায়, নিজেকে চিকিৎসক ও আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেয়া রাকিব-রেহেনা
দম্পতি সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, নার্সের চাকুরি
দেয়ার নাম করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৬-৭ বছর আগে জেলার শিবগঞ্জ
উপজেলা থেকে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার-চাঁদলাই গ্রামে এসে বসবাস
শুরু করেন। পরে ভুক্তভোগীদের মামলায় ৪ বছর আগে ৪০ দিন জেল খেটে জামিনে
বের হয়ে আসেন রাকিব আলী।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা শহরের বিশ্বরোড মোড়ের আবাসিক হোটেল আল
হেরা বোর্ডিংয়ে মেয়ে সরবরাহের কাজ করে রাকিব। এনিয়ে একবার পুলিশ তাকে
আটকও করে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এখন মাঝে মধ্যেই
রাতের বেলায় মাইক্রোতে করে খদ্দের ও অচেনা মহিলাদের যাতায়াত রাকিব-রেহেনা
দম্পতির বাসায়। রাকিবের প্রথম স্ত্রী আমেনাকেও ব্যবহার করা হতো এই অনৈতিক
কাজে।

চাঁদলাই গ্রামের যুবক রজব আলী বলেন, সরকারি বরাদ্দের পানির পাম্প দেয়ার
কথা বলে গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা,
আফতাবের ছেলে মনিরুলের কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা, আজহারুলের কাছ থেকে ২৯
হাজার টাকা নেয়াসহ গ্রামের সহবুল, ময়না বেগম ও শফিকুলের কাছ থেকেও
বিভিন্ন পরিমানে অর্থ নেয় রাকিব-রেহেনা দম্পতি। কিন্তু সেই পাম্প আর
বসেনা এলাকায়।

এদিকে মো. রহমত আলী জানান, ১০ বছর আগে মৃত শরিফুলের স্ত্রী শুকতারার কাছে
ব্যাংক হতে টাকা উঠিয়ে দেয়ার নামে চেক জালিয়াতি করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে
ঢাকায় পালিয়ে যায় রাকিব। একই গ্রামের রেজাউলের স্ত্রী সুলতানার কাছে
ত্রাণ দেয়ার নাম করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেন রাকিব। এই আইডি কার্ড
ব্যবহার করে একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঝণ নিলে ফেঁসে যায় দিনমজুর
রেজাউল। এমনকি করোনাকালে সরকারি সহায়তা দেয়ার কথা বলেও ৪০-৫০টি পরিবারের
কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে কিছুই দেননি রাকিব-রেহেনা দম্পতি।
বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে চলে স্বামী-স্ত্রী। এমনকি বিরাট বড়
বড় আওয়ামীলীগ নেতা-নেত্রীর পরিচয় দেয় তারা। আর এসব শুনে ভয়ে তাদের
বিরুদ্ধে গ্রামের কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা।

রাকিবের অপরাধ বিষয়ে তার আপন চাচা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রামের
চাঁদলাই জামে মসজিদের জমি দিয়েছিলেন আমার বাবা ও রাকিবের দাদা মৃত আলফাজ
উদ্দীন। তাই মসজিদের সকল কর্মকান্ডেও কর্তৃত্ব দেখাতে চাই রাকিব-রেহেনা
দম্পতি। নিজে মসজিদ কমিটির কোন সদস্য না হলেও চাচাতো ভাই খোকন সভাপতি
হওয়ায় মসজিদের কৌটার টাকাও আত্মসাৎ করে তারা। ১ বছর আগে মসজিদের জন্য
বরাদ্দ ২ টন চাল নিজেরাই ভোগ করেছে। ২ বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
থেকে সম্পূর্ণ কাজ করার কথা বলে মসজিদের হিসাব থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা
নিয়ে ঢাকায় যায় রাকিব। কিন্তু তারপর মসজিদের কাজের কোন খবর নেয়।

তিনি আরো বলেন, ৩ বছর আগে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম
তসি মসজিদের সামনের ৩ বিঘার একটি সরকারি পুকুর মসজিদের নামে ইজারা নিয়ে
দেয়। এই পুকুরেও জোরপূর্বক মাছ মেরে নেয় রাকিবের লোকজন। কেউ নিষেধ করলেই
শুরু হয় তার উপর অন্যায় অত্যাচার। এমনকি গত ১৫-১৬ দিন আগেও রাতের
অন্ধকারে মাছ মারার সময় আব্দুল মালেক নামের এক ব্যক্তি মানা করতে গেলে
তার ওপর হামলা করে রাকিবের লোকজন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ৪ দিন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলো মামুন। আর এই দম্পতির
কাজে তাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন হামলা ও অপকর্মে কাজ করে রাকিবের
চাচাতো ভাই খোকন, মামাতো ভাই আনারুল, ভাগ্নে আজিজুল, সবুজ, চাচা তরিকুলসহ
আরো কয়েকজন।

মো. শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, মসজিদের ইমাম তাদের কথা মতো কাজ না করলেই
তাকেও তাড়িয়ে দেয় রাকিব-রেহেনা। এমনকি ইমামদের জঙ্গি হিসেবে নাম দিয়ে
পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নিজেদের আজ্ঞাবহ করে রাখে তারা।
এ বিষয়ে ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম বলেন,
সরকারি পুকুর ও মসজিদ নিয়ে কয়েকবার সালিশ হলেও তা তারা মানে না।
মেম্বার-চেয়ারম্যানকে কোন পাত্তা দেয় না। সালিশে বসলেই সাবেক এমপি ও জেলা
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের দোহায় দিয়ে স্বেচ্ছাচারীতা
করে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান
মো. তসিকুল ইসলাম তসি বলেন, ঝিলিম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে
রাকিবকে বিআরডিবি’তে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। পরে সেখানে
চাকুরিরত অবস্থায় সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে ঢাকায় পালিয়ে যায় রাকিব। আবার
নিজ এলাকায় ফিরে এসে লোকজনের কাছে বিভিন্ন সরকারি চাকুরি দেয়ার নাম করে
বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়। মসজিদের জন্য সরকারি পুকুর ইজারা করে
দিয়েছিলাম, সেটিও দখল করে ভোগ করছে রাকিব ও তার লোকজন। তাদের এমন
কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আসলে রেহেনায় হলো রাকিবের চালক।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেহেনা খাতুন। একজন সমাজ সেবক পরিচয় দিয়ে
তিনি বলেন, আমাকে সামজিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্মানহানি করতেই এমন অভিযোগ করা
হয়েছে। এ সময় নিজেকে সদর উপজেলা মহিলালীগের পূর্বের কমিটির সদস্য হিসেবে
পরিচয় দেন রেহেনা খাতুন। এমনকি এ সময় সংবাদটি প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকের
পায়ের নিচের মাটি থাকবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT