ঢাকা (রাত ১:০৬) শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

প্রবীন প্লান্টার সিরাজুল ইসলামের হাত ধরে হামিদিয়া চা বাগানে উৎপাদন হচ্ছে মান সম্পন্ন চা

<script>” title=”<script>


<script>

মোঃ জাকির হোসেন, জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার দিনের শুরুতেই বাঙালীদের দৈনন্দিন জীবনের পানীয় তালিকা ও অতিথি আপ্যায়নের প্রধান তালিকার শীর্ষে হচ্ছে চা। চা অনেক সমস্যার সমাধান করে যেমন মাথা ব্যথা শরীরের ক্লান্তিভাব দুরসহ নানা উপকার করে থাকে। চা না খেলে আমরা অনেকেই মনে করি যে দিনটা যেনো আজ বৃথা হয়ে গেলো।

চায়ের জন্ম স্থান হলো চীন। ১৭৩৭ সালে চিনের সম্রাট শেংনাঙ,চায়ের আবিষ্কার করেন। বৃটিশ ভারতে চায়ের জন্ম হয় ১৮৫৪ সালে। বৃটিশ ভারতের প্রথম চা বাগান হলো সিলেটের মালনি ছড়া চা বাগান। ১৮৬০ সালে দ্বিতীয় চা বাগান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় মৃর্তিঙ্গা চা বাগান। এটাও বৃটিশ ভারতের তৈরি। ১৯৫৫ সালে হামিদিয়া টি এস্টেট বাগানের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী দেওয়ান আব্দুল বাসেত, হামিদিয়া চা বাগানের প্রতিষ্ঠা করেন। উনার পিতার নামানুসারে, এই বাগানের নাম করন করেন হামিদিয়া টি এস্টেট। প্রকৃতির লিলা ভুমি এই হামিদিয়া চা বাগান। এখানে আছে ২ টি ঐতিহাসিক মাজার। ১ জন হলেন শাহ গাজী (রহ:) আরেকজন হলেন শাহ কালু (রহ:)।

উপরোক্ত দু’টি মাজারেই হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা  রাহমাতুল্লাাহি আলাইহির আগমন ঘটেছিলো। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে এখানে আছে আরো একটি আশ্চর্য পাথরের মাজার যে পাথরে অনবরত জমে থাকে পানি।

এখানে প্রতি বছরের ফাল্গুন মাসে মাজারের লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও আশেকানদের সমাগম হয়। তারা জড়ো হয়ে জিকির আজকার মিলাদ মাহফিল দোয়া ও গরু জবাই করে শিরনি বিতরন করেন।  বর্তমানে উক্ত বাগানে যে বাংলো আছে সেটিছিলো  রাজা গৌর গোবিন্দের ছোট ভাই রাজা চন্দ্র নারায়ণ শিংহের রাজ প্রাসাদ। বর্তমানে বাংলাদেশের টি এস্টেটের সংখ্যা হচ্ছে ১৭০ টি। বৃহত্তর সিলেটেই আছে ১৪৮ টি ও  চট্টগ্রামে অবস্তিত আছে ২২ টি। ইদানীং উত্তর বঙ্গের পঞ্চগড়ে বেশ কিছু চা বাগান গড়ে উঠেছে। প্রনিধান যোগ্য যে ১৯৫৭/১৯৫৮ সনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাঙালী হিসেবে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাঁর অবদানে আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে ১৭০ টির ও বেশী টি এস্টেট ও চা বাগান, যা বাংলাদেশের চা শিল্পে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনকারি দ্বিতীয় শিল্প, যা বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের পরের স্থান অর্জন করে আছে। হামিদিয়া বাগানের মোট ভুমির পরিমান হচ্ছে ৪৫৫ একর।

২০১২ সাল পর্যন্ত এখানে শ্রমিক সংখ্যা ছিল, মাত্র ৮০ জন। যাহা একটি বাগানের জন্য যথেষ্ট পরিমান ছিলনা। কিন্তুু ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শ্রমিক সংখ্যা বেড়ে ৪০০ জনে পৌছেছে। এটা বাগানের বর্তমান জেনারেল ম্যনাজার সিরাজুল ইসলামের অনেক বড় সফলতা। বাগানের মোট ভুমির ১০০ একর জায়গা, ১৯৫৫ সাল থেকে ২০১২ সালের শেষ পর্যন্ত  ভুমি খেকো ও অবৈধ দখল দারদের দখলে ছিল, যাহা বাগান কর্তৃপক্ষ তাহাদের আওতায় আনতে অক্কম ছিলেন। কিন্তুু ২০১৩ সালের মার্চে সিরাজুল ইসলাম হামিদিয়া চা বাগানের জেনারেল ম্যনাজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করার পর এই বাগানের ৯০ একর জায়গা অবৈধ দখলদার দের কাছ থেকে উদ্ধার করেন, বর্তমানে সেই জায়গায় নতুন করে চা বাগান তৈরি করেছেন। যাহা চা বাগানের জন্য একটি রোল মডেল। বর্তমানে সেই চা বাগানে তৈরি করা হয়েছে, দেশ বিখ্যাত একটি অত্যাধুনিক চা কারখানা। ২০১২ সালে যেখান থেকে চা উৎপাদন ছিলো ৬০ ষাট হাজার কেজি কিন্তুু সেই জায়গায় বর্তমান বর্ষে চা উৎপাদন হবে ২ লক্ষ কেজি যাহা আগের চাইতে প্রায় ৩৫% বেশী। বর্তমানে সেই বাগানে কর্মকর্তা ও  কর্মচারির সংখ্যা আছে ২০ জন, যেখানে ২০১২ সালের আগে ছিলো মাত্র ৫ জন। বাগানের ৯০ একর জায়গা অবৈধ দখলদার দের কাছ থেকে উদ্ধার করতে ভুমি দস্যুদের গড ফাদাররা বাগানের মালিক পক্ষের কাছে উৎকোচ দাবি করেছিলো ১০ কোটি টাকা যে ভুমি মাত্র ২৫ লক্ষ টাকায় উদ্ধার করতে সক্কম হয়েছেন বর্তমান মালিক ও আল-হারামাইন গ্রুপের মালিক জনাব কাজি ওলিউর রহমান ও বাগানের জি এম মোঃ সিরাজুল ইসলাম, এবং তাহাদের প্রধান সহযোগী হিসেবে ছিলেন বাবু জয়ন্ত দেব (ঝন্টু) সহ এই বাগানের আরো অনেকেই। এই বাগানে একটি হাসপাতাল, একটি মসজিদ, একটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি জুনিয়র হাইস্কুল আছে। স্কুলে বাগান কর্তৃপক্ষ ৮ লক্ষ টাকা খরছ করে তৈরি করে দিয়েছেন একটি খেলার মাঠ। যেখানে তৈরি করা হয়েছে বাগান শ্রমিক ও শিশুদের কল্যানার্থে শিশুসদন। মহিলা শ্রমিকদের জন্য নির্মান করা হয়েছে কয়েকটি টয়লেট। যা কোন চা বাগানে এখনো করা হয়নি।

তাছাড়া প্রতিটি লেবার হাউজে আছে পাকা টয়লেট ও রিং টয়লেট। এই বাগানের যাহারা মহিলা শ্রমিক আছেন,  তাহাদের জন্য আছে দুপুরের নাস্তার ব্যবস্থা যা অন্য কোন বাগানে নেই। এই বাগানে অবস্থিত আছে একটি শহীদ মিনার যেখানে প্রতি বৎসর ষাড়ম্বরে পালিত হয় বিজয় দিবস। সর্বসৃকৃত ভাবে হামিদিয়া চা বাগানটি বাংলাদেশের চা শিল্পের মধ্যে একটি রোল মডেল। যাহার অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে আজ অবদি ২০১৯ সাল পর্যন্ত উন্নয়নে রুপান্তরিত হয়েছে। জিএম মোঃ সিরাজুল ইসলাম যাহার বয়স এখন ৭২ এর কোটায় যিনি বাংলাদেশ চা এস্টেট শিল্পের সব চাইতে প্রবীন প্লান্টার হিসেবে পরিচিত। তিনি এ পর্যন্ত ১০ টি নাটক রচনা করেছেন, চায়ের উপরে বিভিন্ন কলাম ও লিখেছেন।

তিনি শুধু নাটক লেখেননি একজন কলামিস্টও এই বয়োজ্যেষ্ঠ লেখক পরিশ্রমি ও প্রবীন প্লান্টার সিরাজুল ইসলাম। ১৩ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪ নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের জানাউড়া গ্রামে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT