ঢাকা (রাত ১০:১৫) বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোটে হেরে ভাতার কার্ড নিয়ে হয়রানির অভিযোগ

<script>” title=”<script>


<script>

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে হেরে বিভিন্ন ভাতার কার্ড নিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তারা হলেন ওই ইউনিয়নের ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফটিক আলী ও মো. আবদুল মালেক। তবে ভাতার কার্ড পাওয়া সুবিধাভোগীদের দিয়ে জোরপূর্বক ও অর্থের বিনিময়ে গণমাধ্যমে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে বলে দাবী ওই দুই ইউপি সদস্যের।

জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ধাইনগর ইউনিয়ন নির্বাচনে দুই ওয়ার্ডের দুই সাবেক ইউপি সদস্য মো. সুকুর মিয়া ও মো. সুবহান আলী অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ৮নং ওয়ার্ডে সাবেক ইউপি সদস্য মো. সুকুর মিয়াকে হারিয়ে নির্বাচিত হন মো. ফটিক আলী এবং ৯নং ওয়ার্ডে আর এক সাবেক ইউপি সদস্য মো. সুবহান আলীকে পরাজিত করে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন মো. আব্দুল মালেক। আর তাই নির্বাচনে হেরে নির্বাচিত দুই ইউপি সদস্যকে হয়রানি করতেই অর্থের বিনিময়ে ভাতার কার্ড করে দেয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন পরাজিত প্রার্থী সাবেক ইউপি সদস্য সুকুর মিয়া ও সুবহান আলী।

সমাজসেবা অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ ও সুবিধাভোগী সূত্রে জানা যায়, নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এখনও নতুন করে কোন ভাতার কার্ডের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাননি। পূর্বের ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সুপারিশ করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বিতরণের কাজ করেছে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। শুধুমাত্র কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করেই ভোটে হেরে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন সাবেক ইউপি সদস্যরা।

এ বিষয়ে ৮০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী বলেন, ৬ মাস আগে তৎকালীন ইউপি সদস্য সুকুর আলীর হাতে সকল কাগজপত্র দিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে বর্তমান মেম্বার ফটিক আলী আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বুঝিয়ে দিয়েছে। এই কার্ড পেতে আগের বা এখনকার কোন মেম্বারকে টাকা দিতে হয়নি। কিন্তু গত ১৫-২০ দিন আগে হঠাৎ করেই সাবেক মেম্বার সুকুর আলী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্যামেরা ও উপস্থিত জনতার সামনে বর্তমান মেম্বার আমাকে কার্ড দিয়েছে এই মিথ্যা কথা বলতে বলে। আর তাই আমাকে শিখিয়ে দেয়া কথা বলেছি। কিন্তু বাস্তবে আমার কাছে নতুন মেম্বার কোন টাকা নেয়নি। সাবেক মেম্বার বলতে বলেছে তাই মিথ্যা বলেছি।

এদিকে বর্তমান ইউপি সদস্য ফটিক ও আব্দুল মালেকের অভিযোগ পাবার পর উপজেলা প্রশাসন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দিলে বিধবা কার্ড পাবার আশায় তদন্ত কমিটির সামনে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান নাসিমা বেগম (ছদ্মনাম) নামে এক ভূক্তভোগী নারী।

এ সময় প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এই মিথ্যা কথা না বললে কার্ড পাবে না, এমন কথা শোনার পর বলেছি। কারন আমার স্বামী মারা যাবার ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও হাজারো দরজা ঘুরে ঘুরে কেউ একটা কার্ড করে দেয়নি। তবে গত কয়েকদিন আগেই ৯নং ওয়ার্ডের মুসলেমা বেগম স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, ৮নং ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তার বয়স্ক ভাতা, হাজেরা বেগম বিধবা ভাতা, মজিবুর রহমানের মা বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন।

তাদের দাবি আগের ইউপি সদস্যকে কাগজপত্র দেয়ার পর বর্তমান ইউপি সদস্য ফটিক আলী ও আব্দুল মালেক তাদেরকে কার্ড বিতরণ করেছেন। তবে আগের ইউপি সদস্য সুকুর মিয়া অনেকের কাছে ভাতার কার্ডের জন্য আবেদন করার সময় টাকা নিয়েছিলো বলে অভিযোগ অনেকের।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক হুমায়ন কবীর বলেন, এখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি নিয়ে খেলা চলছে। ভোটে হেরে বর্তমান ইউপি সদস্যদেরকে হয়রানি করতেই এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে তার দাবী।

তিনি বলেন, উল্টো আমরা শুনেছি আগের মেম্বাররা ভাতার কার্ডের আবেদনের সাথে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা নিয়েছে। তবে বর্তমান বা সাবেক যেই মেম্বারই টাকা নেন না কেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা চাই সরেজমিনে সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

কথা হচ্ছিলো ৮নং ওয়ার্ড সদস্য ফটিক আলীর সাথে। তার দাবি, ভোটে হেরে সাবেক মেম্বার সুকুর আলী তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে তদন্ত করলেই সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে, সাবেক মেম্বার সুকুর মিয়ার টাকা নেয়ার ঘটনা।

আর ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এতে কোন প্রার্থীর ক্ষিপ্ত হবার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। তবে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বরে আমি মনে করি কারণ আমি একটিও মানুষের কাছে কোন প্রকার অর্থ গ্রহণ করিনি।

তবে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাবেক ইউপি সদস্য সুকুর মিয়া। তিনি জানান, কার্ড বিতরণের সময় বর্তমান ইউপি সদস্য অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ভোটে হারার সাথে এই অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।

আর ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুবহান আলীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয় নিয়ে ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলাতে ভাতার কার্ডে টাকা নেয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ভোটে হেরে যাওয়ার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে নানাভাবে হয়রানি করতেই এসব অভিযোগ করা হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী বা মিথ্যা অভিযোগকারী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT