ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:০০) বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে সেই দুই মেয়র খোকন ও নাছির

এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে সেই দুই মেয়র খোকন ও নাছির



করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ রয়েছে সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নগরীর ছিন্নমূল মানুষ, হতদরিদ্র, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষ। গ্রামের একই অবস্থা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অল্প আয়ের মানুষরা।

মানুষের এই দুঃসময়ে রাজধানীর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। অন্যদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। দুই সিটির এই দুই মেয়র শুধু খাদ্যসামগ্রী বিতরণই নয়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান বিতরণ করছেন।

এ ছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ ইত্যাদি কাজ করছেন তারা। বিদেশ ফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতেও তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য গঠন করে দেওয়া হয়েছে পৃথক পৃথক কমিটিও।

নগরীর রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে মেশিন (ব্লিচিং পাউডার) কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তবে এক্ষেত্রে কঠোরভাবে জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসব কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তারা। দুই সিটির বাসিন্দাদের অভিমত, তিন-চার মাস আগেও রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মেয়র হওয়ার বাসনা নিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশাল বিলবোর্ড, রঙিন পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন সাটিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন জনগণের পাশে থাকার নানা রকম প্রতিশ্রুতিও।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব হওয়ার পর থেকেই ঘরে ঢুকে গেছেন সে সব নেতা। নগরীর অনেক এমপিরও কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। যেখানে কোনো নেতার উপস্থিতি নেই সেখানে ঝুঁকি নিয়েও জনগণের পাশে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও চট্টগ্রামের বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রাণঘাতী করোনা সচেতনতায় এক লাখ লিফলেট বিতরণ, ৭২৪টি ডিজিটাল স্ক্রিন, সোশাল মিডিয়া এবং ডিএসসিসির ওয়েব পোর্টালে প্রচার করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে জীবাণুনাশক স্প্রে (ব্লিচিং পাউডার) ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রয়োগের নিয়ম ৭২৪টি ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচার করা হচ্ছে।

গত ২৪ মার্চ হতে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাউন্সিলরদের প্রধান করে ৭৫টি ওয়ার্ডে ৭৫টি কমিটি এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে ১০টি আঞ্চলিক কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৫ মার্চ থেকে ৮টি ওয়াটার বাউজার প্রতি গাড়ি প্রতিদিন ৬ ট্রিপ করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার ব্লিচিং মিশ্রিত পানি প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্প্রে করে যাচ্ছে।

২৮ মার্চ থেকে ২০০ স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে জীবাণুনাশক সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড মিশ্রিত পানি স্প্রে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গত ২৭ মার্চ দুই শতাধিক ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষকে ৫০০ টাকা করে নগদ প্রদান করা হয়।

২৮ মার্চ থেকে বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া দিনমজুর রিকশাচালক হতদরিদ্র ও বস্তিবাসীদের মাঝে শুকনা খাবার (১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, ১টি ৫৭০ সাবান) বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

একমাস বিনামূল্যে ৫০ হাজার পরিবারের মধ্যে তা বিতরণ করার কাজ চলমান রাখা হবে। কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কাজ করছে।

এ ছাড়াও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের জন্য রোগীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন ও তাদেরকে মোটিভেট করছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতদরিদ্র মানুষকে সর্বাত্মক সাহায্য এবং সহযোগিতা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তার নির্দেশনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার অধিক্ষেত্র এলাকার ৫০ হাজার পরিবারকে একমাস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আমাদের সব চেষ্টা ও শক্তি দিয়ে এই অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, কোনো নাগরিক যদি বাসায় থেকে আমাদের হটলাইনে ফোন করে বলেন- তিনি খাবার সংকটে রয়েছেন, তাহলে আমরা তার বাসায় খাবার পৌঁছে দেব।

সাঈদ খোকন আরও বলেন, মেয়র হিসেবে নয়, বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে, রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে আমার দায়িত্ব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সেই মানবিক দিক বিবেচনা থেকেও কাজ করছি। তিনি বলেন, আমি ঢাকার সন্তান।

আমার বাবাও এই নগরীর মেয়র ছিলেন। ঢাকাবাসীর যে কোনো ক্রান্তিকালে আমি পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে নগরীর রাস্তাঘাটে চলছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। প্রতিদিন ওয়ার্ডের বিভিন্ন অলি-গলিতে ছিটানো হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। বিতরণ করা হচ্ছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সহায়তায় তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়াও ৪১টি ওয়ার্ডে ১ লাখ অসচ্ছল পরিবারে হাত ধোয়ার সাবান, বালতি ও মাস্ক বিতরণ, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সিটি করপোরেশন ছাড়াও তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান থেকেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটির বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, শুধু মেয়র হিসেবে নয়, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার দায়িত্ব মানুষের পাশে থাকা। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই দুর্যোগে মানুষের পাশে রয়েছি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি ওয়ার্ডে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নগরবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিংসহ নানামুখী প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম চলছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে বাইরে ঘোরাফেরা না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT