ঢাকা (বিকাল ৪:২৭) শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

অর্ধেক কর্মজীবীই কাজ করেন ৮ ঘণ্টার বেশি : বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ

<script>” title=”<script>


<script>

একজন কর্মজীবী দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করবেন, এটাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি কর্মজীবী দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। জীবিকার তাগিদে তিন কোটির বেশি মানুষকে দৈনিক গড়ে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়।

অনানুষ্ঠানিক খাতের হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, পরিবহন শ্রমিক, বিপণিবিতানের কর্মীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগই সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। রেস্তোরাঁকর্মীদের প্রতি পাঁচজনে চারজনকেই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। আর পরিবহন শ্রমিক ও বিপণিবিতানের কর্মীদের ৭০ শতাংশের বেশিই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। কোনো নিয়োগপত্র বা কাজের চুক্তি না থাকায় মালিকপক্ষ ইচ্ছেমতো বাড়তি কাজ করাতে বাধ্য করেন।

তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষকদের মধ্যে নির্ধারিত ‘নয়টা-পাঁচটা’র বেশি কাজ করার প্রবণতা কম। শিক্ষকদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন এবং সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৫-১৬ প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই জরিপে দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কিংবা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করাকে অতিরিক্ত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক খাতের চাকরিতে দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে ওভারটাইম দিতে হয়। অনানুষ্ঠানিক খাতের ওভারটাইমের বালাই নেই।

এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বেশি কাজ করতে হয়। এটি শোষণের পর্যায়ে পড়ে। কেননা এসব খাতের চাকরির কোনো চুক্তি নেই। তাই মালিকেরা অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নিতে পারেন। রেস্তোরাঁকর্মী, পরিবহন শ্রমিকের পাশাপাশি তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। তাঁদের আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়তি কাজের জন্য টাকা দেওয়া হয় না।

জাহিদ হোসেনের মতে, অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রম অধিকার সুরক্ষিত থাকছে না। বরং অপব্যবহার হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর কর্মসংস্থানের চাপ না কমলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। এ জন্য আরও বেশি আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে ৬ কোটি ২১ লাখ নারী-পুরুষ আছেন। যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এবং যাঁরা কাজ করতে প্রস্তুত আছেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৯৫ লাখ নারী-পুরুষ কোনো না কোনো কাজে সম্পৃক্ত আছেন। অন্তত সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাঁরা।

তবে এই বিশাল কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার জন দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। সেবা খাতের কর্মীদেরই বেশি কাজ করতে হয়। ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার সেবা খাতের কর্মী আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

বিবিএসের জরিপে ২১ ধরনের কর্মজীবীদের শ্রমঘণ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কৃষি, উৎপাদন, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন পরিষেবা, নির্মাণ, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, আবাসন ও খাবার ব্যবসা, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ এবং শিল্প-বিনোদন।

৭৮ শতাংশ রেস্তোরাঁকর্মী আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

সারা দেশের পথে-প্রান্তরে হাজার হাজার ছোট-বড় রেস্তোরাঁ দেখা যায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীন খোলা থাকে এসব রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁর বয়-বেয়ারা, বাবুর্চিদের অবিরাম কাজ করতে হয়। রেস্তোরাঁকর্মীরা প্রতি সপ্তাহে ৬২ ঘণ্টা বেশি কাজ করেন। সাপ্তাহিক ছুটি না থাকলে তাঁদের দৈনিক গড়ে প্রায় ৯ ঘণ্টার কাজ করতে হয়। ৭৮ শতাংশ রেস্তোরাঁকর্মীকে দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়।

এরপর বাস-ট্রাক, টেম্পো, অটোরিকশাসহ পরিবহন শ্রমিকেরা সপ্তাহে গড়ে ৫৮ ঘণ্টা কাজ করেন। ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টরদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। অন্যদিকে দোকানের মালিক-কর্মীদেরও ৭৩ শতাংশই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

৩৫ শতাংশ সরকারি কর্মচারী আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন

৩৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন। তবে কত শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আট ঘণ্টার কম অফিস করেন, তা বিবিএসের জরিপে বলা হয়নি। প্রতি চারজন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র একজনকে আট ঘণ্টার বেশি অফিস করতে হয়। শিক্ষা খাতেই আট ঘণ্টার কম অফিস করার প্রবণতা সবচেয়ে কম; মাত্র ২৫ শতাংশ।

কম শিক্ষিতদের বেশি খাটতে হয়

বেশি শিক্ষিতরা ভালো চাকরি পাবেন, এটাই স্বাভাবিক পাবেন। যাঁরা পড়াশোনার সুযোগ পাননি কিংবা স্বল্পশিক্ষিত, তাঁরা কাজ পেলেও বেশি খাটতে হয়। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষা সুযোগ পাননি এমন কর্মজীবীদের মধ্যে ৯৪ হাজারের বেশি দৈনিক গড়ে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT